এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণ: ৩৮ ঘণ্টায়ও গ্রেপ্তার হয়নি কেউ

সিলেটে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার নেই। শুক্রবার রাত পৌনে আটটা থেকে সাড়ে আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। সে হিসাবে ৩৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের বিরুদ্ধে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেছেন। যে ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।  
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, আসামিদের ধরতে একটি সমন্বিত দলের মাধ্যমে মহানগর পুলিশের সাতটি দল মাঠে কাজ করছে। আসামিদের গ্রামে, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি আসামিরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালাতে না পারেন, সে ব্যাপারেও জেলা পুলিশ সতর্ক আছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পরপরই আসামি শনাক্ত হলে পুলিশ গ্রেপ্তার তৎপরতা শুরু করে। মামলা হওয়ার আগে থেকেই পুলিশ আসামি ধরার অভিযান চালিয়েছে। মামলার পর গ্রেপ্তার অভিযান আরও জোরালো করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আসামিদের বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী যেসব এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রয়েছে, সেখানকার পুলিশকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকায় জেলা পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

আরও পড়ুন

যেখানে ধর্ষণের এই ঘটনা ঘটেছে সেটি সিলেটের ১২৮ বছরের পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাস। ঘটনার শুরু এমসি কলেজের ফটকের সামনে থেকে। ফটকটি সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশেই। ফটকের ভেতরের মাঠে অনেকে বেড়াতে যান। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই দম্পতিও সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে স্বামী গিয়েছিলেন সিগারেট কিনতে। ফিরে এসে দেখেন, স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করছেন কয়েকজন তরুণ। স্বামী প্রতিবাদ করলে মারধর করে তাঁদের দুজনকে গাড়িসহ জোর করে তুলে নিয়ে যান ওই তরুণেরা। এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে একেবারে শেষ প্রান্তে নেওয়ার পর স্বামীকে একটা স্থানে আটকে রাখেন তাঁরা। তরুণীকে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে দুর্বৃত্তরা এলাকা ত্যাগ করেন। তরুণীর স্বামীর বরাত দিয়ে পুলিশ সাংবাদিকদের এ ঘটনা জানায়।
ভুক্তভোগী তরুণী বর্তমানে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি আছে। তিনি আতঙ্কে ভুগছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইউনুছুর রহমান জানিয়েছেন।

তরুণীর স্বামী মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাঁরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক আহমদ (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)। এজাহার অনুযায়ী, আসামি সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জে। তাঁর বর্তমান ঠিকানা এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলো। শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনির বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়ায়। বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ। মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে। রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে। অর্জুনের বাড়ি জকিগঞ্জের আটগ্রাম। তারেক সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।

আরও পড়ুন

কলেজ সূত্র জানায়, সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। অর্জুন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তারেক ও রবিউল বহিরাগত। এর মধ্যে রবিউল ও মাহফুজুর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। তাঁরা জুয়া ও মদের আড্ডা বসাতেন। তাঁদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ছাত্রাবাসের যে কক্ষটির সামনে ঘটেছিল, সেটি ‘ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ’ হিসেবে পরিচিত। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রাবাসটিতে অবস্থান করছিলেন ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা। পরে শনিবার পুলিশ ওই কক্ষে অভিযান চালিয়ে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে। ওই কক্ষে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর থাকতেন। তাঁকে একমাত্র আসামি করে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়েছে।