কক্সবাজার থেকে ‘ইয়াবার সঙ্গে আইসও’ আনছেন বিজিবির বরখাস্ত সদস্য

আরিফুর রহমানসহ তিনজনের কাছ থেকে জব্দ করা আইস, ইয়াবা
ছবি: সংগৃহীত

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) থেকে বরখাস্ত এক সৈনিকের বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই বছর ধরে তিনি কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ও আইসসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্যাদি ঢাকায় এনে তা বিক্রি করতেন বলে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছয় কোটি টাকা দামের নতুন ধরনের মাদক আইসসহ গ্রেপ্তার হন আরিফুর রহমান (২৭) ও তাঁর দুই সহযোগী সিরাজুল ইসলাম ও মমতাজ বেগম। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেন। তাঁদের কাছ থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম আইস, ১৮ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়।

তিনজনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তখন আরিফুর রহমানদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।

আরিফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার সদরের ঘোনাপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ফিরোজ আহমেদ। মামলার কাগজপত্রে বলা হয়েছে, আরিফুর রহমান ২০১৯ সাল থেকে বিজিবিতে অনুপস্থিত।

যোগাযোগ করা হলে বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান গত সোমবার রাতে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে আরিফুর রহমানকে ২০১৯ সালে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি আর বিজিবির সদস্য নন।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এক কেজির অধিক আইস, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আরিফুর রহমানসহ তিনজনকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। ২ অক্টোবর এই আদেশ দেওয়া হয়। পরে পুলিশ আরিফুরসহ অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, কক্সবাজারের বড়বাজার এলাকা থেকে আইস ও ইয়াবা কিনে তাঁরা ঢাকায় আসেন। পরে মোহাম্মাদপুরের তাজমহল রোডের কৃষি মার্কেটের সামনে অবস্থান করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁদের সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের পরিদর্শক কাজী ওয়াজেদ আলী আদালতে এক প্রতিবেদনে জানান, বিজিবির বরখাস্ত সৈনিক আরিফুর রহমানসহ অন্যরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সক্রিয় সদস্য। মাদকদ্রব্য ইয়াবা ও আইস কেনাবেচাই তাঁদের কাজ। নতুন ধরনের মাদক আইস বাংলাদেশে আসা শুরু করেছে।
মামলার এজাহারের বক্তব্য অনুযায়ী, আসামিরা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগরসহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারিদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করে আসছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের এই কারবারে যুক্ত হয়েছে আইস।

তবে আরিফুর রহমানের আইনজীবী শাহরিয়ার ভূঁইয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল মাদক কারবারে জড়িত নন। আদালতেও লিখিতভাবে একই কথা বলেছেন তিনি।

আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের পাশাপাশি ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে বিজিবির লোগো সংবলিত দুটি ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে আরিফুর ও তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায়ও তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

কীভাবে ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি হয়, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তাঁদের এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

আরিফুর রহমানের গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত কম ছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এম এ কাশেম। সম্প্রতি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আরিফুর রহমান বিজিবিতে চাকরি করতেন বলে তাঁরা জানতেন। টেকনাফের দিকে তিনি একটি বাগান কিনেছেন বলে শুনেছেন। এক বছর আগে শুনেছিলেন, আরিফুরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কী কারণে বরখাস্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।

ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সম্প্রতি টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনিও আরিফুরকে চিনতেন। তবে আরিফুর মাদক কারবারে জড়িত কি না, সে বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।