কারাগারে বন্দীর লাশ, হত্যা না আত্মহত্যা?
কক্সবাজার জেলা কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ড প্রতিদিন তালাবদ্ধ হয় বিকেল পাঁচটায়। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ওয়ার্ডের বাইরের সিঁড়িঘরে পাওয়া গেল গলায় ফাঁস লাগানো বন্দীর লাশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ওই ঘটনা তদন্তে আজ মঙ্গলবার কারা কর্তৃপক্ষ দুটি ও জেলা প্রশাসন একটি গঠন করেছে। কারা কর্তৃপক্ষ দুদিন ও জেলা প্রশাসন তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ওই হাজতির নাম মো. মোস্তফা (২৫)। তিনি সদর উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের বশির আহম্মদের ছেলে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, মারামারির মামলায় মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে গত ১৭ নভেম্বর কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তাঁর মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের যৌথ তদন্ত চলছে। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কয়েদি ও হাজতিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। তারপরও ভেতরে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও কারাগার সূত্রে জানা যায়, মোস্তফা কারাগারের মাতামুহুরি ভবনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজতি। এ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫৩০ জনের। কিন্তু বন্দী আছেন ৪ হাজারের বেশি। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার দিকে সব বন্দীকে ওয়ার্ডে রেখে তালাবদ্ধ করা হয়। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মাতামুহুরি ভবনের ছাদে যাওয়ার সিঁড়িঘরে মোস্তফার লাশ পাওয়া যায়। তাঁর গলায় কাপড় দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। তাঁকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর গলায় ফাঁসের দাগ আছে।
কারা সূত্র জানায়, বিকেল পাঁচটায় ওয়ার্ড তালবদ্ধ করলেও মোস্তফা কীভাবে সিঁড়িঘরে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না, তা তদন্তে দুটি কমিটি করেছে কারা প্রশাসন।
এ বিষয়ে কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. নেছার আলম বলেন, কয়েদি ও হাজতিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। তারপরও ভেতরে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল, এতে কারও অবহেলা ও অপরাধ আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের আলোকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে পুলিশ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে। ৩ দিনের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।