খাবারের অর্ডার দেওয়ার কথা বলে সঙ্গে নিয়ে অপহরণ

প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে অপহৃত ব্যবসায়ী মিহির রায়কে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার তাঁকে রাজধানীর দক্ষিণখানের চেয়ারম্যানপাড়ার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। অপহরণে জড়িত অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাজধানীর মিন্টো রোডের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আজ মঙ্গলবার বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা-ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি জানান, গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. মিরাজ (৩৫) ও বৃষ্টি (২১)। তাঁদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত ছুরি, ৫৭টি বৈদ্যুতিক তার ও স্ক্রুড্রাইভার জব্দ করা হয়। মিহিরের স্ত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া ৪৯ হাজার টাকাও উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে ফুড স্টোর নামে মিহির রায়ের একটি ফাস্ট ফুডের দোকান আছে। ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি দোকানে খাওয়াদাওয়া শেষে মিহির রায়ের প্রশংসা শুরু করেন। পরে তিনি জানান, তাঁর এক বড় ভাইয়ের অনুষ্ঠানে ৮০ প্যাকেট খাবারের অর্ডার করবেন। এ জন্য তিনি মিহিরকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারি মিহিরের স্ত্রীর মুঠোফোনে তাঁর স্বামীর নম্বর থেকে কল আসে। তবে কথা না বলেই কেটে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর অন্য একটি নম্বর থেকে মিহির রায়ের স্ত্রীকে কল দেওয়া হয়। ফোনের ওপাশ থেকে মিহির রায়ের কণ্ঠ শুনতে পান তিনি।

মিহির রায় তাঁর স্ত্রীকে বলেন, তাঁর হাত, পা ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা দিলে অপহরণকারীরা তাঁকে ছেড়ে দেবেন। পরে মিহির রায়ের স্ত্রী অপহরণকারীদের দেওয়া বিভিন্ন নম্বরে ২ লাখ ৯১ হাজার টাকা বিকাশ করেন। আরও টাকা না দিলে ক্ষতি করার হুমকি দেন অপহরণকারীরা। এরপর ১৬ জানুয়ারি মিহির রায়ের স্ত্রী উত্তরা পশ্চিম থানায় অপহরণের মামলা করেন।

মিহির রায়ের বরাত দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তাঁকে একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বেশির ভাগ সময় তাঁর হাত-পা ও চোখ বেঁধে রাখা হতো। তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়ে তা মুঠোফোনে স্ত্রীকে শুনিয়ে টাকা দাবি করা হতো। প্রায় সময় তাঁকে দুটি করে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে রাখা হতো।

পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার জানান, মামলার পর অপহৃত ব্যবসায়ী মিহির রায়কে উদ্ধারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালায় ডিবির উত্তরা বিভাগ।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার একটি বাড়ি থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মিহির রায়কে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপহরণকারী চক্রের দুই সদস্য মিরাজ ও বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিরাজ ও বৃষ্টি বিভিন্ন সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

এদিকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের তথ্যে ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন এক গাড়িচালক। তিনি জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাতে তিনি বিমানবন্দর সড়কে গাড়ি চালানোর সময় একটি মাইক্রোবাস তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে।

একপর্যায়ে তাঁর গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জেরা শুরু করেন তাঁরা। গাড়ির কাগজ নিয়ে সামনের গাড়িতে থাকা ‘স্যারের’ কাছে যেতে বললে তিনি সেই মাইক্রোবাসের সামনে গেলেও তাঁকে টেনে সেখানে তোলা হয়। এরপর হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন তাঁরা। ইলেকট্রিক শক দিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ফোনে চিৎকার শোনানো হয়। এভাবে তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা নিয়ে ১৪ দিন পর তাঁকে রাজধানীর ৩০০ ফুট সড়কে নামিয়ে দেওয়া হয়।

অপহরণের শিকার আরও এক ব্যক্তি বলেন, তিনি ১০ ডিসেম্বর রাতে মোহাম্মদপুর এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন অপহরণকারীরা। পরে তাঁকে অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। এভাবে ১২ দিন আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন তাঁরা। এরপর এক রাতে চোখ বেঁধে তাঁকে রাস্তায় নামিয়ে দেন।