গৃহবধূর চুল কেটে মুক্তিপণ আদায়, আ.লীগ নেত্রীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রতীকী ছবি

ঝালকাঠিতে এক গৃহবধূকে অপহরণ করে মাথার চুল কেটে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ পারভীন বেগম (৩০) নামের ওই গৃহবধূ হাজির হয়ে মামলাটি করেন।

বিচারক মামলাটি ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই গৃহবধূকে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন।
মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমী, শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন আনিসুর রহমানের বোন সেলিনা আক্তার (৫০) ও আইরিন পারভিন (৪২), যুব মহিলা লীগের কর্মী রাখি আক্তার (৩৮) ও ফাতেমা শরীফ (৩৫)। আসামিদের মধ্যে সেলিনা আক্তার বাদীর (পারভীন বেগম) স্বামী বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী ছিলেন।

বাদী আরজিতে উল্লেখ উল্লেখ করেছেন, গত ১০ জুলাই ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁরা ঝালকাঠি শহরের সুতালড়ির এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বিয়ের পর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভাই আনিসুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেত্রী শারমিন মৌসুমীর নেতৃত্বে আসামিরা ৩০ আগস্ট তাঁদের ভাড়া বাসায় হামলা চালান। তাঁদের মারধর করে ২ লাখ টাকা ও তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। সেখান থেকে বেধড়ক মারধর করে আসামিরা তাঁকে (পারভীন) তুলে নিয়ে শহরের চাঁদকাঠি এলাকার একটি হোটেলের নিচে আটকে রাখেন। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটায়। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁর মাথার চুল কেটে দেন। পরে আনিসুর ও শারমিন মৌসুমী বাদীর ভাইকে মুঠোফোনে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বোনকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। না হলে তাঁকে হত্যা করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। বাদীর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন ৩১ আগস্ট দুপুরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ ও স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ না করার শর্তে বাদীকে ছাড়িয়ে নেন।
বাদী পারভীন বেগম জানান, আসামিরা অবরুদ্ধ করে রাখায় মামলা করতে দেরি হয়েছে। ঘটনার সবকিছু স্বামীর ভাড়া বাসার সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে।

এ বিষয়ে শারমিন মৌসুমী বলেন, ‘ঘটনার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জড়িত করায় আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।’
আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনকে বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন সময় নির্যাতন করতেন। আমার বোনের অনুমতি ছাড়াই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আমাদের পরিবারকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে দিয়ে মামলাটি করিয়েছেন। আমার বোনও তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করবেন।’

বাদীর আইনজীবী শফিকুল ইসলাম জানান, আদালতের বিচারক সদর থানার ওসিকে মামলাটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই গৃহবধূকে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন।
ঝালকাঠির সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশের কপি হাতে পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।