গ্রেপ্তার যুবকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ব্যাংক ম্যানেজারকে বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে ব্যাংক লুটের চেষ্টার অভিযোগে যুবককে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। বুধবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়
সংগৃহীত

গাজীপুরে ব্যাংকের শাখা কার্যালয়ে ঢুকে বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে ব্যাংক লুটের চেষ্টার সময় গ্রেপ্তার যুবকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর মহানগর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালতের বিচারক মো. হামিদুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর আগে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই যুবকের বিরুদ্ধে বাসন থানায় মামলা হয়। প্রাইম ব্যাংকের জয়দেবপুর-চৌরাস্তা শাখা ব্যবস্থাপক এম ফরিদ আহমেদ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।

ব্যাংক লুটের চেষ্টার ঘটনা গতকাল দুপুরের। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বেলা পৌনে একটার দিকে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের জয়দেবপুর-চৌরাস্তা শাখায় ঢুকে শাখা ব্যবস্থাপককে বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে ব্যাংক লুটের চেষ্টা করেছিলেন গ্রেপ্তার যুবক।

আরও পড়ুন

ওই যুবকের নাম আবু বকর সিদ্দিক (৩০)। তিনি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার বিসারীঘাটা এলাকার মৃত সেকান্দার আলী হাওলাদারের ছেলে। থাকেন গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজারের বটতলা এলাকায়। ওই এলাকার ভেলমন্ট গার্মেন্টসে চাকরি করে করোনার সময় চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

আটকৃত যুবককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যুবকটি জানান, তিনি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। ২০০৭ সালে মাদ্রাসার লেখাপড়া ছেড়েছেন। পরে পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে চাকরি নেন। শেষ চাকরিটি তিনি গাজীপুরের ভেলমন্ট কারখানায় করেছেন। কিন্তু করোনাকালে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
মো. রফিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বাসন থানা

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. আজাদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই যুবকের সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে গ্রেপ্তার যুবক চান্দনা চৌরাস্তার শাপলা ম্যানশনের দ্বিতীয় তলার প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের জয়দেবপুর চৌরাস্তা শাখায় প্রবেশ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিল কালো একটি ব্যাগ। সেটি নিয়ে সরাসরি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মোল্লা ফরিদ আহমেদের কক্ষে তিনি ঢুকে পড়েন। এ সময় ব্যবস্থাপককে মুঠোফোন থেকে ভিডিও ক্লিপ চালু করে দেখিয়ে বলেন, ব্যাগের ভেতরে বোমা আছে। বোমার রিমোট ব্যাংকের নিচে অপেক্ষারত তাঁর লোকজনের কাছে আছে। যদি ম্যানেজার ও ব্যাংকের লোকজন চিৎকার করেন, তাহলে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সবাইকে মেরে ফেলা হবে। সবাই প্রাণে বাঁচাতে চাইলে ব্যাংকের ভল্ট খুলে বস্তায় ভরে তাঁকে টাকা দিতে হবে বলে জানান ওই যুবক। ব্যবস্থাপক কৌশলে তাঁকে বসিয়ে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ সময় ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীরা ওই যুবককে ধরে ফেলেন। এদিকে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে যুবককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ বোমা বহনকারীর কাছ থেকে ব্যাগটি আলাদা করে ফেলে। পরে বোমা বহনকারী ব্যক্তিকে আটক করে বাসন থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ আরও জানায়, ইতিমধ্যে ব্যাগে থাকা বস্তুটি বাস্তবে বোমা কি না, তা যাচাই করতে ঢাকায় বোমা ডিসপোজাল টিমকে খবর দেওয়া হয়। দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা সিটি কাউন্টার টেররিজম (সিটিটিসি) ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বোমা ডিসপোজাল টিম ব্যাংকে পৌঁছায়। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায়, ব্যাগে থাকা বস্তুটি ছিল বোমা। এটি একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। পরে শাপলা ম্যানশনের সামনে বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আটকৃত যুবককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যুবকটি জানান, তিনি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। ২০০৭ সালে মাদ্রাসার লেখাপড়া ছেড়েছেন। পরে পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে চাকরি নেন। শেষ চাকরিটি তিনি গাজীপুরের ভেলমন্ট কারখানায় করেছেন। কিন্তু করোনাকালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। চাকরিচ্যুতের পর থেকেই তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। এই হতাশায় থেকে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করেন। তবে যুবকটির সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আছে কি না, বিস্তারিত জানতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।