ঘুমন্ত মা-মেয়েকে পেট্রল ঢেলে হত্যা!
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পেট্রলের আগুনে ঘুমন্ত মা ও শিশুকন্যাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন আরেক কন্যা। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন ফরাশপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৪০) ও দেড় বছর বয়সী মেয়ে তাসমিয়া।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তাদের বাড়ির জামাই কামাল হোসেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। কারণ জামাই-মেয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুবই খারাপ যাচ্ছিল। ঘটনার দুদিন আগে জামাই বাড়িতে এসে তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে গেছেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, রাত আনুমানিক ১টা ৪৫ মিনিটের সময় দুর্বৃত্তরা পাল্লাবিহীন জানালা দিয়ে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে খাটে ঘুমিয়ে থাকা মা তাসলিমা খাতুন আর তাঁর বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা শিশু তাসমিয়ার শরীরে আগুন ধরে যায়। তাদের চিৎকারে পাশেই ঘুমিয়ে থাকা বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুন জেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেও সামান্য দগ্ধ হন। সবার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আগুন নিভিয়ে মা ও মেয়েকে দ্রুত কালীগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভোর রাতেই তাঁদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় তাঁদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন পরিবারের লোকজন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পর দুজনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নজরুল ইসলামের ভাই সোহেল উদ্দিন জানান, তাদের বড় মেয়ে ঊর্মি খাতুনকে ৪ বছর আগে যশোর জেলার লেবুতলা ইউনিয়নের আগ্রাইল গ্রামের মৃত বাবুল হোসেনের পুত্র কামাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেন। লেদমিস্ত্রি কামাল ঊর্মিকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। নানা কারণে তাদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। গত ঈদুল আজহার আগে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুবই খারাপ যাচ্ছিল। এই খবর পেয়ে তাঁরা ঊর্মিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। দাওয়াত দেওয়ার পরও না এসে কামাল ঊর্মিকে পাঠিয়ে দিতে বলেন।
সোহেল আরও জানান, দুদিন আগে জামাই কামাল হোসেন তাঁদের এলাকায় এসেছিলেন। বাড়িতে না গিয়ে পাশের লোকজনের মাধ্যমে সবাইকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গেছেন।
স্থানীয় নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুল হক জানান, দুর্বৃত্তরা ঘরের জানালা দিয়ে পেট্রল ছুড়ে যেভাবে মা-মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছে তা খুবই দুঃখজনক। শিশুটির শরীরের পোড়া স্থান দেখে কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তিনি এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেছেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আরও জানান, পরিবারের অভিযোগ অনুসারে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতিও চলছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।