
দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ ও বিক্রি নিষিদ্ধ। তার পরও রাজধানীর চকবাজারে এই পলিথিন ব্যাগ অনেকগুলো কারখানায় তৈরি হচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হয় বহু দোকানে। চকবাজারের ওই এলাকাটি ‘পলিথিন বাজার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পরিবেশ অধিদপ্তর এই পলিথিন বাজারে অভিযান চালিয়ে নয়াব প্লাস্টিক, ফারুক মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও মদিনা মেটাল নামের তিনটি পলিথিন কারখানা সিলগালা করে। অভিযান পরিচালনাকারী দলটি দুই কারখানার দুজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আনুমানিক ১৫ টন পলিথিন ব্যাগ ও পলিমার (পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল) জব্দ করে। অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট শাখা) মো. আলমগীর এই অভিযানে নেতৃত্ব দিলেও তাঁদের সঙ্গে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম ও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও পরিবেশ অধিদপ্তর এই বাজারে দুবার অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। কারণ, পলিথিন ব্যবসায়ীরা খুব সংঘবদ্ধ। তা ছাড়া, ব্যবসায়ীরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সহায়তা পান।
বৃহস্পতিবারের অভিযানের সময় ১৪ জন র্যাব ও ৩০ জন পুলিশ সদস্যের একটি বাহিনী অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিল। মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা যে অভিযান চালিয়েছি তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’
সরকার ২০০১ সালে ২০ মাইক্রনের (পুরুত্বের একক) নিচে ও ২০০৮ সালে ৫৫ মাইক্রনের নিচে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু শহরে ও গ্রামে, বড় বড় বিপণিবিতান বা কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগে পণ্য দিচ্ছেন এবং ক্রেতারা সেই পলিথিন ব্যাগে পণ্য নিচ্ছেন। আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক ২৩ সেপ্টেম্বর চকবাজারে গিয়ে বহু দোকানে পাইকারি ও খুচরা পলিথিন বিক্রি হতে দেখেন। পলিথিন ব্যাগ তৈরির অনেক কারখানারও সন্ধান পান। এক কিলোগ্রাম পলিথিন ব্যাগ ৩৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
চকবাজারের ছোট ছোট গলির ভেতর মানুষ বাস করে না, এমন অনেক ভবনের এক বা দোতলায় পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। কারখানার দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া থাকলেও ভেতরে পলিথিন তৈরি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি কারখানার মালিক বলেন, পলিথিন ব্যবসা অবৈধ হলেও স্থানীয় নেতা ও পুলিশের সহায়তায় তাঁরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
অবৈধ পলিথিনের শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানতে এই প্রতিবেদক ২৪ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে যান। তখন মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হলে প্রথমে ব্যবহারযোগ্য বিকল্প শপিং ব্যাগ বাজারে আনতে হবে। বাজার তদারকির দুর্বলতার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের জনবল অনেক কম।
তার এক দিন পরই গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর অভিযান চালায় চকবাজারে। অভিযান চলাকালে উপমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আগের অভিযান দুটি সফল হয়নি। তখন ব্যবসায়ীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। তাই এবার বেশি পুলিশ ও র্যাব সদস্য সঙ্গে নেওয়া হয়। পলিথিনের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।