
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ছটাকী লঞ্চঘাট এলাকায় খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে অবৈধভাবে চরের বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় বালু তোলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে যথেচ্ছ বালু তোলার ফলে মতলব উত্তর উপজেলার বাহাদুরপুর, সুগন্ধি, ছটাকী বাবুরবাজার ও ষাটনল এলাকার অন্তত ৪০-৫০ হাজার মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, ছটাকী ও বাহাদুরপুর এলাকায় প্রায় ২০০ খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। জাহাজ ভর্তি করে বালু অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানকার বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। মান ভালো হওয়ায় সারা দেশে এই বালুর চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুল হক বাবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করছে। তিনি স্থানীয় সাংসদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার চাচাতো ভাই। সম্প্রতি মোহনপুর এলাকায় বালু তোলা নিয়ে হামলায় দশানী এলাকার এক ব্যক্তি নিহত হন। এরপরও অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, বালু তোলা ও এর ভাগাভাগি নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মন্ত্রীর আপন চাচাতো ভাই বাবুল চৌধুরী, মিজান কাজীসহ কয়েকজন সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার মোহনপুর থেকে ষাটনল পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালু তুলেই যাচ্ছেন। ভয়ে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পায় না।
এ ব্যাপারে মোহনপুর ইউপির চেয়ারম্যান শামসুল হক বাবুল চৌধুরী বলেন, ‘আমি বালু তুলি না। তবে মিজান কাজী নামের একজন হাইকোর্ট থেকে রিট করে এই বালু তুলছেন।’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমার এলাকায় কেউ বালু তুলে থাকলে বিষয়টি আমি দেখে ব্যবস্থা নেব।’
মিজান কাজীর বাড়ি মোহনপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামে। এ ব্যাপারে মিজান কাজীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বলেন, এ এলাকায় আগে নদীর মাঝখান থেকে বালু তোলা হতো। এখন নদীর তীরে চরের বালু কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দেবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম এ মমিন বলেন, নদী থেকে যে কেউ যখন-তখন বালু তুলতে পারেন না। বালু তোলার ব্যাপারে সরকারের এখনো কোনো নীতিমালা হয়নি। তবে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার বিভাগ বালু তুলতে পারে। অন্য কেউ বালু তুললে সেটা হবে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘যাঁরা বালু তুলছেন, তাঁরা একটি সিন্ডিকেট। তাঁদের বিষয়ে কথা বলা যাচ্ছে না। কারণ তাঁরা হাইকোর্টে রিট করে রেখেছেন। আর এর জবাব দিতে দিতে আমি হয়রান হয়ে যাচ্ছি। তবুও আমরা পিছপা হচ্ছি না। সরকারের অন্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এ ব্যাপারে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’
মতলব উত্তরের ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ সরকার বলেন, ‘ছটাকী ও ষাটনল এলাকায় মুন্সিগঞ্জের কিছু লোক এসে বালু তোলার চেষ্টা করে। আমরা তাদের ধাওয়া করি। তবে চাঁদপুরের লোকজন বালু তুলছেন পাশের মোহনপুর ইউনিয়ন এলাকায়।’