চাপে ফেলে কম দামে কৃষিজমি কেনার চেষ্টা

মানিকগঞ্জের ঘিওরের পুরানগ্রামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের কেনা জমিতে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত খুঁড়ছে। এতে পাশের ফসলি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
মানিকগঞ্জের ঘিওরের পুরানগ্রামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের কেনা জমিতে খননযন্ত্র দিয়ে গভীর গর্ত খুঁড়ছে। এতে পাশের ফসলি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরানগ্রামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্যক্তিদের চাপে ফেলে কম দামে কৃষিজমি কেনার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কৃষকেরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষিজমি রক্ষায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কৃষকেরা।

লিখিত অভিযোগ এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুরানগ্রামে অ্যাশিউর কোম্পানি নামের একটি বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তিন ফসলি জমি বিক্ষিপ্তভাবে কিনেছে। এরপর সেই কেনা জমিসহ স্থানীয় কৃষকদের আশপাশের অবিক্রীত ফসলি জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে দালাল চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অবিক্রীত ওই সব ফসলি জমি কেনার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া জমি থেকে গভীর করে গর্ত করে মাটি খনন করার কারণে পাশে কৃষকের জমি ভেঙে যাচ্ছে। কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরানগ্রামে ভুট্টা, বোরো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করা হয়েছে। এসব ফসলি জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বেড়া দেওয়ায় চাষাবাদের জন্য নিজেদের জমিতে যাতায়াতে কৃষকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

এদিকে খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে গভীর করে মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে। এতে পাশের কৃষিজমি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

পুরানগ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তাঁর ৩৯ শতাংশ জমির পাশে ওই প্রতিষ্ঠানটি জমি কিনেছে। তবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে তাঁর জমিতেও। জমিতে তিনি ভুট্টার আবাদ করেছেন। এভাবে চাপে ফেলে এবং দালালদের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর জমি কম দামে কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই অভিযোগ করেন কৃষক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, প্রথমে তাঁর ৩২ শতাংশ জমিসহ প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব কেনা জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়। এখন তাঁর সেই জমিও প্রতিষ্ঠানটি জোর করে কম দামে কেনার পাঁয়তারা করছে।

একইভাবে পাশের বাইশটা গ্রামের জিন্নত আলী, লাল চান, পুরানগ্রামের নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের জমি কম দামে কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অন্যের জমির কিছু অংশ দখল করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। দৌলতপুরের তালুকনগর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি কেনা জমির পাশের জমির বেশ কিছু অংশ দখল করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। আমার জমিরও কিছু অংশ দখল করে বেড়া দিয়েছে।’

এদিকে এসব কৃষিজমি রক্ষায় মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা। ওই দিনই তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। বুধবারও নিজেদের জমির পাশে মানববন্ধন করেন তাঁরা।

গত বুধবার ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৮০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। স্বেচ্ছায় জমি বিক্রি করেছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যেখানে-সেখানে শিল্পকারখানা স্থাপন করে কৃষিজমি নষ্ট করা যাবে না। আমাদের শিল্পকারখানা যেমন দরকার, তেমনি কৃষিজমিও প্রয়োজন। তা ছাড়া চাপে ফেলে জমি কেনার চেষ্টা অপরাধ। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।