চিনে ফেলায় পরিবারের সবাইকে হত্যা

নিহত খুকু মণি, আফসিয়া ও আয়নাল হক
নিহত খুকু মণি, আফসিয়া ও আয়নাল হক

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের ইজিবাইকচালক আয়নাল হকের ঘরের মালামাল লুট করতে সিঁধ কেটে ঢুকেছিলেন চার ব্যক্তি। আয়নাল হক তাঁদের চিনতে পারায় প্রথমে শ্বাসরোধ করে তাঁকে (আয়নাল) হত্যা করা হয়। তারপর তাঁর স্ত্রী খুকু মণি ও আড়াই বছরের মেয়ে আসফিয়াকে হত্যা করে তিনজনের গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশগুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়।

গত ৩০ জুলাই রাতে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দুজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মঠবাড়িয়া থানায় আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান। গ্রেপ্তার দুই আসামি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত উপজেলার ধানীসাফা গ্রামের মো. অলি বিশ্বাস (৩৮) ও একই গ্রামের মো. রাকিব ব্যাপারীকে (২০) গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। অলি বিশ্বাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর বাড়ির পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি স্টিলের পাইপ, একটি রামদা এবং অলির বসতঘর থেকে একটি দেশি দা, লুট করা কিছু টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়।

হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, নিহত আয়নাল হকের ঘরে ডাকাতেরা ঢোকার পর তিনি তাঁদের চিনে ফেলেন। এ সময় আয়নাল হক ডাকাতদের বলেন, ‘তোমরা যা নেওয়ার নিয়ে যাও, তবু আমাদের মেরে ফেলো না।’ আয়নাল হক ডাকাতদের চিনে ফেলায় তাঁরা মালামাল লুট করার পর আয়নাল হক, তাঁর স্ত্রী ও কন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন ডাকাতেরা। পরে লাশগুলোর গলায় রশি লাগিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন তাঁরা।

তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার অলি বিশ্বাস ও রাকিব ব্যাপারী। শনিবার বিকেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো
তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার অলি বিশ্বাস ও রাকিব ব্যাপারী। শনিবার বিকেলে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই সকালে নিজ ঘর থেকে ইজিবাইকচালক আয়নাল ও তাঁর স্ত্রী-কন্যার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১ আগস্ট নিহত খুকু মণির বাবা আবুল কালাম সরদার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে স্থানীয় থানায় হত্যা মামলা করেন। তারপর সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। তবে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে হত্যার ব্যাপারে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার সাফা গ্রাম থেকে অলি বিশ্বাসকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাকিব ব্যাপারীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ জেড এম মাসুদুজ্জামান বলেন, অলি বিশ্বাস ও রাকিব ব্যাপারীকে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হবে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।