ছারছিনার পীর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার করছেন

মুক্তিযুদ্ধের সময় ছারছিনার পীরের মাদ্রাসায় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারের ক্যাম্প ছিল। সেখানে রাজাকার সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে হত্যা এবং নারীদের ধর্ষণ করা হতো। অথচ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর সত্য আড়াল করতে ছারছিনার পীর শাহ মো. মহিবুল্লাহ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করছেন।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে পিরোজপুর পৌরসভা মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান।

হাবিবুর রহমান বলেন, ১৩ মার্চ ছারছিনা দরবারের মাহফিলে পীর শাহ মো. মহিবুল্লাহ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের মাদ্রাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তাও করা হতো। তিনি পীরের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

পীর শাহ মো. মহিবুল্লাহর মুঠোফোনে ফোন করা হলে আবদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, পীর সাহেব সফরে রয়েছেন। এ ব্যাপারে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মাওলানা আলী আকবরের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আলী আকবর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সুবেদার মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে ছারছিনা মাদ্রাসায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নেন। পরে পাকিস্তানি সেনারা মাদ্রাসায় এসে অবস্থান নিলে পীর সাহেবের কিছু করার ছিল না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু পীর শাহ আবু জাফর মো. সালেহকেসরকারি খরচে হজে পাঠান। আর দুই মুক্তিযোদ্ধার লাশ গুমের অভিযোগ ঠিক নয়।’

১৩ মার্চ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ছারছিনা দরবার শরিফের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক মাহফিলের শেষ দিনে পীর শাহ মো. মহিবুল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁদের মাদ্রাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ১৫ মার্চ ছারছিনা পীরের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শেখ কুতুবউদ্দিনআহমেদ। তিনি বলেন, ‘ছারছিনা পীরের মিথ্যা ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিস্মিত হয়েছি। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছারছিনা মাদ্রাসা ছিল রাজাকার ও আলবদরদের প্রশিক্ষণ শিবির।’

জানতে চাইলে নেছারাবাদ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছারছিনা পীরের বাড়িতে রাজাকারের ক্যাম্প ছিল। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। একাত্তরের ২২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ছারছিনা পীরের বাড়ি আক্রমণ করেন। ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজাকারদের যুদ্ধ হয়। ২৬ নভেম্বর রাজাকারদের গুলিতে বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার গাজী মতিউর রহমান এবং ইপিআর সদস্য কাউখালী উপজেলার আনসার আলী শহীদ হন। এরপর রাজাকাররা মতিউর ও আনসার আলীর লাশ গুম করে। মতিউরের বৃদ্ধ মা ছেলের কবর দেখার জন্য মতিউরের সহযোদ্ধাদের কাছে অনেকবার আকুতি করেছেন। তিনি ছেলের কবর না দেখে মারা গেছেন। আমি গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, ছারছিনা পীরকে দুই শহীদের কবর আমাদের দেখাতে হবে। কিন্তু পীরের পক্ষ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।’

জাহিদ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছারছিনার তৎকালীন পীর শাহ আবু জাফর মো. সালেহ পাকিস্তান সরকারের পক্ষ নেন। স্বাধীনতার পর তিনি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাবরণ করেন। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে শাহ আবু জাফর মো. সালেহকেশিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।