জঙ্গি হামলার বিচার পাঁচ বছরেও হয়নি

২০১৫ সালের এই দিনে জঙ্গিরা হোসেনি দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলা চালিয়েছিল
ফাইল ছবি

পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া প্রস্তুতি মিছিলে বোমা হামলা মামলার বিচার পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। তিন বছর আগে ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মধ্যে মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১২ জন। ২০১৫ সালের এই দিনে জঙ্গিরা হোসেনি দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলা চালিয়েছিল।

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ছয় জঙ্গি কারাগারে আটক আছেন। বাকি চার জঙ্গি জামিনে বেরিয়ে গেছেন। চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় ইমামবাড়ায় বোমা হামলা হয়। এতে দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। সেখান থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস—আইইডি) উদ্ধার করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি তাদের শক্তির জানান দিতে শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় জমায়েতকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল, যাতে দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একই বছর ২৬ নভেম্বর বগুড়ার একটি শিয়া মসজিদে হামলা চালিয়ে মুয়াজ্জিনকে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরের বছর মার্চে ঝিনাইদহে শিয়া সম্প্রদায়ের একজন হোমিও চিকিৎসককেও হত্যা করা হয়। তিনটি হত্যাকাণ্ডের দায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দাবি করলেও সরকারের দাবি, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই।

হোসেনি দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকার চকবাজার থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। প্রথমে মামলাটি চকবাজার থানার পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) দেওয়া হয়। মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দলের পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল নব্য জেএমবি ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, হোসেনি দালানে জঙ্গি হামলা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই হামলায় নব্য জেএমবির ১৩ জঙ্গির জড়িত থাকার সত্যতা পায় ডিবি। এঁদের মধ্যে তিনজন ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে।

সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত সরকারি কৌঁসুলি মো. গোলাম ছরোয়ার খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আদালত বন্ধ থাকায় মামলার বিচারকাজও বন্ধ ছিল।

এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করতে তাঁরা তৎপর রয়েছেন।