জাবির আন্দোলনকারীদের বাড়িতে পুলিশি হয়রানির অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে করা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে করা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কয়েকজন সংগঠকের বাড়িতে পুলিশি ‘হয়রানির’ অভিযোগ উঠেছে।

গত শনিবার বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকারীদের অন্তত ১০ সংগঠকের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা।

উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানার ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’–এর মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে তাঁদের পরিবার আতঙ্কের মধ্যে আছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধন থাকতে পারে। আন্দোলনকে দমানোর একটি অপকৌশল হিসেবেই এসব করা হচ্ছে।’

ওই ১০ আন্দোলনকারী হলেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক হাসান জামিল, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুশফিক-উস-সালেহীন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান ও মুখপাত্র আরমানুল ইসলাম খান এবং জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবর রহমান।

আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে শঙ্কায় পরে গেছে। রাষ্ট্র কোনো বিষয়ে তদন্ত করতে চাইলে তার একটা নিয়ম আছে। কিন্তু পুলিশ দিয়ে পরিবারকে এ ধরনের হয়রানি কেন।’

মুশফিক-উস-সালেহীন বলেন, ‘পুলিশ আমার নানার বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারের বিস্তারিত তথ্য নেয়। এরপর থেকে আমার পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত। তারা আমাকে নিয়ে এখন চিন্তিত। উপাচার্য ঊর্ধ্বতন যোগাযোগের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করা নিন্দনীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আমি নানার বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলাম। পুলিশ সেই ঠিকানাতেই গিয়েছিল। আমার ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলন দমাতেই এমন কাজ করছে।’

একইভাবে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রানির বিষয়টি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন রাকিবুল হক, মাহাথির মোহাম্মদ, সুদীপ্ত দে, হাসান জামিল, শোভন রহমান ও আরমানুল।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে ইন্টেলিজেন্সরা (গোয়েন্দা সংস্থা) কাজ করছে। আমরা এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না।’

এদিকে বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ। গতকাল রোববার সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক অনীক রায় স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সকল তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর পরও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে রক্ষার জন্য একের পর এক অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে সরকার। আন্দোলনকারীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে এবং পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাঁদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এই দমন নীতি বন্ধ না করলে এই আন্দোলন আরও বৃহত্তর রূপ নেবে। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের দমন-পীড়ন চালানো হলে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা তাঁদের পাশে দাঁড়াবে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর গত সোমবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলেও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গতকাল ও আজ সোমবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আন্দোলনে বিরতি রাখা হয়। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে আবার কর্মসূচি শুরু করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।