জামাইকে কী দিয়ে বোঝাবেন!
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে গুরুতর দগ্ধ শিশু আসিয়া খাতুনকে। এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন তার নানি আনোয়ারা বেগম বিলাপ করছেন, এখন মেয়েজামাইকে তিনি কী দিয়ে বোঝাবেন! আসিয়াই যে তার বাবা-মায়ের একমাত্র সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তান!
নানি আনোয়ারা (৫০) ও নাতনি আসিয়া (৪) পেট্রলবোমার শিকার। অবরোধের মধ্যে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর তানোরে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় এই দুজনসহ ১০ জন দগ্ধ হন। এর আগে সোমবার রাজশাহী নগরের রেশম ভবনের সামনে যাত্রীবাহী বাসে ছোড়া পেট্রলবোমায় আহত হন আরও একজন। এই ১১ জনের মধ্যে সাতজন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। অন্যরা হলেন ফারহানা খাতুন (৫), জুলেখা বেগম (৪০), আশরাফ আলী (৪৫), রমজান আলী (২৮) ও ওজুফা বেগম (৪০)।
আইসিইউতে থাকা আসিয়ার বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বাবার নাম আজিমুদ্দিন। আদরের নাতনি আসিয়াকে নিয়ে আনোয়ারা গিয়েছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার খড়িবাড়ি গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে। ফেরার পথে পেট্রলবোমার শিকার হন তাঁরা। গতকাল হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আনোয়ারা জানালেন, আসিয়ার মুখসহ শরীরের সিংহভাগ ঝলসে গেছে। তাঁর সঙ্গে বেড়াতে এসেই আসিয়ার এই অবস্থা হলো! আসিয়ার বড় বোন প্রতিবন্ধী।
আনোয়ারা-আসিয়ার মতো সম্পর্কে নানি-নাতনি ফারহানা ও জুলেখা। তাঁদের বাড়ি তানোরের এলামদহ চানপুর গ্রামে। ফারহানার বাবার সংসারে খুব টানাটানি। তাই সে দাদি জুলেখার সঙ্গে ঢাকায় থাকে। জুলেখা ও তাঁর স্বামী মজিবুর রহমান ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে ফিরেছিলেন তাঁরা। দাদির (জুলেখার) বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে ওই বাসে উঠেছিলেন।
চিকিৎসাধীন মোহনপুর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আশরাফ আলীর (৪৫) অবস্থাও ভালো নয়। তাঁর মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে আছেন চাচাতো ভাই জামাল উদ্দিন। তিনি জানালেন, আশরাফ আলী নওগাঁর চৌবাড়িয়ার হাটে গরু কিনতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তানোরে এসে ছেলেকে গরুসহ ভটভটিতে তুলে দিয়ে তিনি ও তাঁর আত্মীয় আবু বকরসহ বাসে উঠেছিলেন। জামাল জানালেন, আবু বকরের জামাকাপড় পুড়েছে। তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে জানান, আশরাফ আলীর অবস্থা সংকটাপন্ন। শিশু আসিয়ার অবস্থাও ভালো নয়। অন্যদের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।