জাল টাকার কারখানায় গ্রেপ্তার তাঁরা

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হুমায়ূন কবির ও তাঁর সহযোগীরা
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে জাল টাকা তৈরির অভিযোগে হুমায়ূন কবীরসহ চারজনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এ নিয়ে একই অভিযোগে হুমায়ূনকে ষষ্ঠবারের মতো গ্রেপ্তার করা হলো। রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ বলছে, মোহাম্মদপুরে নিজের জাল টাকা তৈরির কারখানা থেকে হুমায়ূনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন, মো. জামাল (৪২), সুখী আক্তার (৩০) ও তাসলিমা আক্তার (৩০)।

গোয়েন্দা বিভাগের (গুলশান) উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হুমায়ূনকে এর আগে র‍্যাব, ডিবি ও থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁর এক ভাই কাওসারও জাল টাকার কারবারি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। অভিযানে গ্রেপ্তার দুই নারী হুমায়ূনের বেতনভুক্ত কর্মচারী। জাল টাকা তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের কাগজ তৈরি, তাতে বিভিন্ন ধরনের আঠা, নিরাপত্তা চিহ্ন বসানো ও ছাপা হওয়ার পর নোটগুলোকে মূল নোটের মতো করে কাটার জন্য হুমায়ূন ওই দুই নারীকে ১৫ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকায় চাকরি দিয়েছিলেন।

পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল টাকা উদ্ধার করেছে। সেই সঙ্গে জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি প্রিন্টার, পাঁচটি স্ক্রিন প্রিন্ট দেওয়ার ফ্রেম, জাল নোট তৈরির জন্য আড়াইহাজার পিস সাদা কাগজ, নয়টি বিভিন্ন রঙের কালির কার্টিজ, সিকিউরিটি থ্রেড পেপারের রোল একটি, প্লাস্টিকের কালির কোটা তিনটি ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। অভিযানে উদ্ধারকৃত সরঞ্জাম দিয়ে আনুমানিক ৫ কোটি জাল টাকা তৈরি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা।

জব্দকৃত জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম
ছবি: সংগৃহীত

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, হুমায়ূন ও জামাল ২০০৮ সালের দিকে দুরুল হুদা নামের এক কারিগরের কাছে জাল টাকা তৈরির কৌশল শেখেন। এরপর হুমায়ূন নিজেই জাল টাকা তৈরির কারখানা চালু করেন। জামাল শুরু থেকেই হুমায়ূনের তৈরি জাল টাকার ডিলার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।

অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি জানান, এই চক্রের মূল হোতা প্রথম পাইকারি বিক্রেতার কাছে প্রতি লাখ জাল টাকা বিক্রি করতেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করতেন ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। প্রথম খুচরা বিক্রেতা আবার এক লাখ টাকা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার কাছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন।

মাঠ পর্যায়ে দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার হাত ধরে সেই টাকার মূল্য হয়ে যায় আসল টাকার সমান। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচা করে এই জাল টাকা বাজারজাত করতেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, চলমান মহামারির মধ্যেও তাঁদের কাজ থেমে ছিল না। চক্রটি আসন্ন দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জাল টাকা বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মোহাম্মদপুর থানায় নতুন করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।