জিন তাড়ানোর কথা বলে...

কয়েক দিন ধরে শিশুটির জ্বর যাচ্ছিল না। পরিবারের লোকজন নিয়ে গেলেন পার্শ্ববর্তী এলাকায় ‘ফকির’ হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে। ওই ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম। শিশুটিকে দেখে নজরুল বলেন, তাকে জিনে ধরেছে, জিন তাড়াতে হবে। এর জন্য তুলা রাশির জাতক একজনকে লাগবে।
তুলা রাশির জাতক ব্যক্তিকে কোথায় পাওয়া যাবে, তা-ও জানিয়ে দিলেন নজরুল। এর পর শুরু হয় চিকিৎসা। পুলিশ বলছে, শিশু ও ওই ব্যক্তিকে পাশাপাশি শুইয়ে ঝাড়ফুঁকের নামে চলে নজরুলের লাফালাফি। আর এতে মারা যান তুলা রাশির জাতক ওই ব্যক্তি।
ঘটনাটি ঘটে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ধোড়া গ্রামে। গত বুধবার রাতের ওই ঘটনায় পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে মূল অভিযুক্ত নজরুল এখনো পলাতক। মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মোফাজ্জল হোসেন। পেশায় তিনি নৈশপ্রহরী ছিলেন।
বগুড়ার গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল বাসার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলে বাবু মিয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার থানায় মামলা করেছেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার ধোড়া পূর্বপাড়া গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে জেমি আকতার (১২) কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। কয়েক দিন ধরে জ্বর থাকায় পরিবারের লোকজন শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী মহিষাবান পূর্বপাড়ার নজরুল ইসলামের (৫০) কাছে নিয়ে যান। এ সময় নজরুল শিশুটির স্বজনদের বলেন, শিশুটিকে জিনে ধরেছে। এই জিন ছাড়াতে তুলা রাশির জাতক একজনকে লাগবে।
ওসি বলেন, অভিযুক্ত নজরুলই জানান, চকমরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও গোলাবাড়ি বাজারের নৈশপ্রহরী মোফাজ্জল হোসেন তুলা রাশির জাতক। এরপর নজরুল নিজেই জিন ছাড়ানোর জন্য বুধবার রাতে মোফাজ্জল হোসেনকে ডেকে নিয়ে শিশুটির বাড়িতে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন সহযোগী ছিলেন। তাঁরা জিন ছাড়ানোর নামে নানা কুসংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড করেন।
ওসি নিহত ব্যক্তির পরিবারের বরাত দিয়ে বলেন, নজরুল অসুস্থ শিশু ও ওই ব্যক্তিকে পাশাপাশি শুইয়ে দেন। একপর্যায়ে মোফাজ্জলের বুকের ওপর উঠে লাফালাফি শুরু করেন নজরুল। এ সময় নজরুলের সহযোগীরা মোফাজ্জলকে শক্ত করে ধরে রাখেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁর শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে অবস্থা বেগতিক বুঝে নজরুল তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পালিয়ে যান। রাতেই মোফাজ্জলকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
ওসি বলেন, এই হত্যা মামলায় নজরুলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত বাদল প্রামাণিককে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মোফাজ্জলের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।