টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠান উধাও

সমবায় কার্যালয়ের নিবন্ধন নেই। ব্যাংকি কার্যক্রম চালানোরও অনুমতি নেই। এমন একটি তথাকথিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটে পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে।

এ বিষয়ে সাতজনকে আসামি করে ৮ জানুয়ারি পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সদর উপজেলার বড় আউলিয়াপুর গ্রামের ব্যবসায়ী খোকন সিকদার। মামলার আসামিরা হলেন মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের ইমান্দি গ্রামের নাসির উদ্দিন, তাঁর ভগ্নিপতি রুমান খান, নাসির উদ্দিনের স্ত্রী রুমা বেগম, রুমান খানের স্ত্রী শিল্পী বেগম এবং বাদল মোল্লা, কুদ্দুস হাওলাদার ও শাহজাহান গাজী। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করা হলেও স্থানীয় এক ইউপি সদস্য জানান, প্রতারক চক্রটি মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, এক বছর আগে নাসির উদ্দিনসহ ৮-১০ জন নাভানা কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের পাড়ুখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অস্থায়ী একটি ঘরে তাঁরা কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁরা বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। তবে প্রথম প্রথম তাঁদের এ প্রস্তাবে কেউ সাড়া দেননি। তবে গত তিন মাসে তাঁরা নানা কৌশলে বেশ কিছু লোককে তাঁদের কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। পর্যায়ক্রমে তাঁরা সদর উপজেলার মরিচবুনিয়ার পাশাপাশি মাদারবুনিয়া, কালিকাপুর ও আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অস্থায়ী কার্যালয় খুলে প্রচার চালাতে থাকেন। গত কয়েক মাসে এসব ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের পর গত ২২ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে হঠাৎ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উধাও হয়ে যান।

টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হওয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাসির উদ্দিন মরিচবুনিয়া ইউনিয়নে নাভানা কোম্পানি নামের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন। নাসির উদ্দিনের ভগ্নিপতি মামলার ১ নম্বর আসামি রুমান খানসহ আসামিরা একেকজন একেক এলাকার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁরা বেশ কিছু দিন আগে আউলিয়াপুর ফতুল্লা বাজারে বসে ১ লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ২৫ হাজার টাকা মুনাফা এবং তাঁদের কাছে ৪০ হাজার টাকা দামের একটি গরু বিক্রি করলে মুনাফাসহ এক মাস পর ৬০ হাজার টাকা লাভ দেবেন বলে প্রলোভন দেখান। তাঁদের এ প্রস্তাবে অনেকেই আকৃষ্ট হন। এরপর আসামিরা মামলার বাদী খোকন সিকদারের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা, সাক্ষী আবদুল হক সিকদারের কাছ থেকে ৫ লাখ, দুলাল মোল্লার কাছ থেকে ৩ লাখ, কাওসার সিকদারের কাছ থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার, আলম শরীফের কাছ থেকে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকাসহ মোট ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেন। তথাকথিত ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তখন ২২ ডিসেম্বর মুনাফাসহ সব টাকা ফেরত দেবেন বলে তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ওই দিন গ্রাহকেরা মুনাফা পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করার পর বিকেলে জানতে পারেন, আসামিরা পালিয়ে গেছেন এবং তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।

বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগের বিষয়ে নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে গতকাল বুধবার বিকেলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে তফালবাড়ীয়া গ্রামের গৃহবধূ শাহনাজ বেগম বলেন, তিনি এক মাস আগে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। এক মাস পর তাঁকে ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠানের কাউকে তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

উপজেলার বড় আউলিয়াপুর গ্রামের হানিফ ফকির বলেন, টাকা খাটিয়ে লাভবান হওয়ার প্রলোভনে পড়ে তিনি ১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এক মাস পর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি কোনো টাকাই পাননি।

গত ২৮ ডিসেম্বর সকালে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ফতুল্লা বাজারের ভুক্তভোগী কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা প্রতারক চক্রের কঠোর শাস্তি দাবি করেন এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান। ২৯ ডিসেম্বর মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের খাটাসিয়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়। এ বিষয়ে মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুবেল মৃধা অভিযোগ করেন, নাভানা কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এ প্রতারক চক্র সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তাঁরা শুনেছেন। তবে এ ঘটনায় তাঁদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।