'ডাকাত ঢুকেছে' - শরীয়তপুরের গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত দুই রাত ধরে শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে—এমন প্রচার চলছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে গভীর রাতে ওই প্রচার চালিয়ে গ্রামবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন গ্রামগুলোতে গিয়ে ও খোঁজ নিয়ে ডাকাতির ঘটনার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গ্রামে মানুষ রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন।

জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়—'গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। গ্রামবাসী সতর্ক হোন। ডাকাত প্রতিরোধ করেন।' তখন গ্রামের মানুষ দলে দলে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশও ছুটে যায়। কিন্তু কোনো ডাকাতির ঘটনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

একই কায়দায় গত বুধবার রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলা, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করা হয়—'ডাকাত এসেছে।' ওই রাতের সাড়ে ১২টার দিকে গোসাইরহাট থানায় ফোন আসে, হাটুরিয়া এলাকায় ডাকাতি হচ্ছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা সোহেব আলী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ছুটে যান ওই এলাকায়। কিন্তু সেখানে কোনো ডাকাতির ঘটনা পাননি। সেখানে অবস্থান করা অবস্থাতেই ওসির কাছে ফোন আসে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের একটি গ্রামে ডাকাত এসেছে। ওসি পুলিশ নিয়ে সেখানে যান। কিন্তু ওই গ্রামেও কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। এভাবে গত দুই রাতে শরীয়তপুরের ৭টি থানার পুলিশ বিভিন্ন গ্রামে ডাকাতির ঘটনা শুনে ছুটে গেছেন। কিন্তু কোথায়ও কোনো ডাকাতির ঘটনা পাননি।

গোসাইরহাট থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে ডাকাতি হচ্ছে—এমন প্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। একজনের কাছ থেকে আরেকজন জানছেন, প্রচার করছেন। এভাবে পুরো থানায় খবর ছড়িয়ে পড়ছে। আর মসজিদ থেকে মাইকিং করায় মানুষ দ্রুত রাস্তায় নেমে আসছেন। এটা যে একটি মহলের গুজব তা মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এক স্কুলশিক্ষক বুধবার রাত আড়াইটার দিকে ফোন করে জানান, পালং এলাকায় ডাকাত ঢুকেছে বলে তিনি মাইকিংয়ে জানতে পেরেছেন। পালং মডেল থানা পুলিশ জানায়, ওই রাতে কোথায়ও ডাকাতির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এসএম আশ্রাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, একটি মহল ডাকাতি হচ্ছে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন। পুলিশ আর জনতাকে হয়রানি করছেন। গুজব ছড়িয়ে তাঁরা হয়তো কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাচ্ছেন। কীভাবে ও কোথা থেকে ওই গুজবের উৎপত্তি, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে এর পেছনে কারা আছেন, তাদের খুঁজে বের করতে।