ডিবির জ্যাকেট পরে অপহরণ

অপহরণকারী চক্রের একজন

ঢাকার বিমানবন্দর সড়ক থেকে দুই ব্যক্তিকে তুলে নেওয়ার ১৩ দিন পর সাত লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। তাঁদের তুলে নেওয়ার সময় অপরাধীদের একজনের গায়ে ছিল পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) জ্যাকেট।

ঘটনাটি এখন ডিবিই তদন্ত করছে। অপহরণকারী চক্রটির সঙ্গে জড়িত একজনের ছবিও পেয়েছে তারা। যদিও কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

অপহরণের শিকার হওয়া দুই ব্যক্তির একজন হলেন নিয়ামত উল্লাহ, যিনি ভাড়ায় গাড়ি চালান। পাশাপাশি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করেন। অন্যজন হলেন নিয়ামত উল্লাহর সঙ্গী রফিক হাওলাদার। ঘটনাটি ঘটে গত ১০ ডিসেম্বর, আর তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয় ২৩ ডিসেম্বর। অপহরণের দুদিন পর ১২ ডিসেম্বর নিয়ামতের মা খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, দুজনকে মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। নিজেদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা জানানোর পর মারধর করে পরিবারকে শোনানো হয়। একপর্যায়ে টাকার পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়। তাঁদের কখনো দুই বেলা খাবার দেওয়া হতো, কখনো তিন বেলা।

নিয়ামতের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন মধ্যরাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনি ভাড়ার গাড়িটি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। কাওলা ওভারব্রিজের কাছাকাছি গেলে পেছনে থাকা একটি টয়োটা হায়েস মডেলের মাইক্রোবাস থেকে তাঁকে থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। নিয়ামত গাড়ি থামান। এরপর মাইক্রোবাস থেকে ডিবির জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তি নেমে নিয়ামতকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যেতে বলেন।

সে অনুযায়ী নিয়ামত লাইসেন্স নিয়ে গেলে হ্যাঁচকা টানে তাঁকে মাইক্রোবাসটিতে তুলে নেওয়া হয়। ধরে নেওয়া হয় তাঁর সঙ্গী রফিককেও। নিয়ামত বলেন, তিনি রফিকের মাধ্যমে এক ব্যক্তির জন্য উড়োজাহাজের টিকিট কেটেছিলেন। সেটি দিয়ে দুজনে গোড়ানের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে গোড়ানে ভাড়া থাকেন।

নিয়ামত উল্লাহ বলেন, তাঁদের দুজনকে ১৩ দিন একটি গুদামঘরের মতো কক্ষে আটকে রাখা হয়। মেঝেতে শোবার জন্য দেওয়া হয় দুটো লেপ। পাশেই কালো মুখোশ পরা বন্দুকধারী কেউ না কেউ সব সময় শুয়ে থাকতেন। অপহরণকারীরা প্রথম দিনই তাঁদের দুজনের মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব নম্বর ও ব্যাংকের ডেবিট কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে নেয়। টাকাও তুলে নেয়, যা তাঁরা পরে জানতে পারেন।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, দুজনকে মুক্তির জন্য ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। নিজেদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা জানানোর পর মারধর করে পরিবারকে শোনানো হয়। একপর্যায়ে টাকার পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়। তাঁদের কখনো দুই বেলা খাবার দেওয়া হতো, কখনো তিন বেলা।

নিয়ামতের ভাষ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন মধ্যরাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তিনি ভাড়ার গাড়িটি চালিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। কাওলা ওভারব্রিজের কাছাকাছি গেলে পেছনে থাকা একটি টয়োটা হায়েস মডেলের মাইক্রোবাস থেকে তাঁকে থামানোর সংকেত দেওয়া হয়। নিয়ামত গাড়ি থামান। এরপর মাইক্রোবাস থেকে ডিবির জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তি নেমে নিয়ামতকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে যেতে বলেন।

নিয়ামত বলেন, তাঁর পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ ও রফিকের পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেওয়ার পর অপহরণকারীরা এক নারীকে ডেকে এনে তাঁর সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তুলে রাখে। পরে এক দিন রাতে তাঁদের পূর্বাচলে ৩০০ ফুট সড়কে ফেলে যায়। ভাড়া বাবদ দুজনকে দুটি ৫০০ টাকার নোটও দেওয়া হয়।

নিয়ামত যে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, সেটিও নিয়ে গিয়েছিল অপহরণকারীরা। পরে এমএফএসের মাধ্যমে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সেটি চট্টগ্রাম শহরে ফেলে রাখা হয়। অপহরণকারী ছেড়ে দেওয়ার সময় রফিকের মুঠোফোনটি দিয়ে দেয়। রেখে দেয় নিয়ামতেরটি। বলা হয়, কয়েক দিন তাদের পর্যবেক্ষণের পর মুঠোফোন ফেরত দেওয়া হবে। কথা অনুযায়ী কিছুদিন পর এসএ পরিবহনের কাকরাইল শাখায় সেটি পাঠিয়ে দেয় অপহরণকারীরা।

১৩ দিন দুজন মানুষকে আটকে রাখল, ছেড়ে দেওয়ার পরও এত দিন গেল, তবু কাউকে ধরতে না পারা হতাশাজনক।
নূর খান, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব

কুরিয়ার সার্ভিসের সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই মাস্ক পরা একজনের ছবি পেয়েছে ডিবি। এই ব্যক্তির ছবি ৭ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছবির ব্যক্তির পরিচয় জানা গেলেই পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা যাবে। কেউ ছবির ব্যক্তির পরিচয় জানলে তাঁকে ০১৩২০-০৪৫৯৮৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ডিবি জানিয়েছে, অপহরণকারীরা নিয়ামত ও রফিকের পরিবারের সঙ্গে ভিওআইপির (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) মাধ্যমে কল করে যোগাযোগ করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের (আইপি) সহায়তা নিয়েছে, তাদের শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু আইপি লগ সংগ্রহে না রাখায় তারা কোনো তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি।

বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে এভাবে অপহরণ, ডিবির জ্যাকেট ব্যবহার এবং অপরাধীদের ধরতে না পারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ দিন দুজন মানুষকে আটকে রাখল, ছেড়ে দেওয়ার পরও এত দিন গেল, তবু কাউকে ধরতে না পারা হতাশাজনক।