ঢাবি-মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের প্রধান ধরা

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যুক্ত চক্রটির প্রধানসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যুক্ত চক্রটির প্রধানসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওই চক্রের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের প্রধান জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ওরফে মুন্নু। অন্যরা হলেন পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন ও এসএম সানোয়ার হোসেন। এর মধ্যে মোহাইমিনুল ও সানোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। ১৯ ও ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয় পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করেছে সিআইডি। ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বিক্রি করে তারা এই টাকা অর্জন করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ নিয়ে মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত করে সিআইডি। ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি প্রশ্ন করার চক্রটির সন্ধান পায় সিআইডি। ১৯ জুলাই চক্রের সদস্য এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

পুলিশ কর্মকর্তা সুমন কুমার দাস বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সানোয়ার ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ও মোহাইমিনুলকে গ্রেপ্তার করে। এরাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ওই দিনই মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করে সিআইডি। মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে সানোয়ার ও মোহাইমিনুল গত বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিনজনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গ্রেপ্তারকৃতরা সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য দেন।

সিআইডি কর্মকর্তা সুমন কুমার দাস বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেসে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা হয়ে আসছে। ওই ছাপাখানা থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম, তাঁর খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কিংবা আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়াটা শিক্ষার্থীদের একটা স্বপ্ন। এ চক্রের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ব্যর্থ হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে গেছেন।

সম্মেলনে উপস্থিত সিআইডির সাইবার অপরাধ বিভাগের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শাহ আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, চক্রটি একেকজনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা ফাঁস করা প্রশ্নপত্র বিক্রি করতেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত আছেন কি না, জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন আসামি আজ শুক্রবার কারাগার থেকে আনা হবে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে সব বেরিয়ে আসবে।