তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক যখন হ্যাকার

তথ্যপ্রযুক্তিবিদ নাজমুস সাকেব নাঈম এক প্রবাসী বাংলাদেশির ডেবিট কার্ড হ্যাক করে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ জন্য তিনি ৮০ দিনে আটটি দেশ থেকে ১,৪৭২টি লেনদেন করেছেন।

নাজমুস সাকেব নাঈম
সংগৃহীত

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতে নাজমুস সাকেব নাঈমকে রীতিমতো তারকা বলা যায়। তাঁর বিরুদ্ধেই কিনা পাপুয়া নিউগিনিতে বসবাসরত এক বাংলাদেশির ডেবিট কার্ড হ্যাক করে প্রায় তিন কোটি টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছয় বছর আগে ঘটে যাওয়া এই জালিয়াতির ঘটনায় সম্প্রতি নাজমুস সাকেবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকার পুলিশ।

নাজমুস সাকেব নাঈম যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন। তিনি থাইল্যান্ডের সিয়াম ইউনিভার্সিটিতে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজের পাশাপাশি নেপালের একটি ব্যাংকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর তৈরি করা পেখম ওয়েবসাইটটি অনলাইনে হোটেল বুকিংয়ের জন্য বিকাশ, সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ফেসবুক-কমার্স বা এফ-কমার্সের জন্য গ্রহকসেবা সমাধান অর্থাৎ ফেসবুকের মাধ্যমে পণ্য কিনতে গ্রাহককে পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য সাকেব উদ্ভাবিত চ্যাট বট ‘দ্য জেড বয়’ নিয়ে মার্কিন সাময়িকী অনট্রাপ্রেনার ও ফোর্বস–এ ২০১৭ সালে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাকেব বেশ কটি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে নানা পদে কাজ করেছেন।

গত ২৫ আগস্ট সাকেব ও তাঁর সহযোগী মইনুল ইসলামকে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পুলিশ। পাপুয়া নিউগিনিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি আবদুল ওয়াহেদের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত ডিসেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি হয়। বাদী ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি সে দেশের সুপারমার্কেট, সুপারশপ চেইন, ফাস্ট ফুড অ্যান্ড বেকারি, রেস্টুরেন্ট চেইন, ফিলিং স্টেশন, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস, কনটেইনার ইয়ার্ড, অ্যাপার্টমেন্ট ইত্যাদি ব্যবসায় জড়িত। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৮ সালে পাপুয়া নিউগিনিতে পাড়ি জমান ওয়াহেদ। সেখানে প্রথমে শিক্ষকতা করলেও পরে ব্যবসা করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ দিনে ওয়াহেদের আন্তর্জাতিক ভিসা কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। দেখা যায় যে হ্যাকার অনলাইনে আটটি দেশ থেকে ১ হাজার ৪৭২টি লেনদেনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, নাজমুস সাকেব অনলাইন কোনো একটি মাধ্যম থেকেই ওয়াহেদের ডেবিট কার্ডের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছিলেন। কার্ডটি হ্যাক করে তিনি বাংলাদেশে বসেই প্রথমে অনলাইনে কেনাকাটা শুরু করেন। পরে কার্ডটি ব্যবহার করে তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার টিকিট কেনেন। টিকিটে ব্যবহৃত একটি ই–মেইল ঠিকানার সূত্র ধরে সাকেব ও মইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাকেবের কাছ থেকে জব্দ করা ল্যাপটপ ও তাঁর তিনটি ই–মেইলে এই জালিয়াতির প্রমাণ মেলে।

তেজগাঁওয়ের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক বলেন, ভিসা কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, হংকং, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে দামি সফটওয়্যার, অ্যাপলের ম্যাকবুক, আইফোন, রোলেক্স ঘড়ি, ক্লাইভ খ্রিশ্চিয়ান ব্র্যান্ডের পারফিউম, ক্যামেরা, কসমেটিকস কেনেন সাকেব। জালিয়াতির কথা শিকার করে তিনি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।