তাঁরা রাতে হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ ডাকাত-ছিনতাইকারী
সারা দিন যে যেখানেই কাজ করুন না কেন, রাতে তাঁরা হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ ডাকাত-ছিনতাইকারী। এ কাজে তাঁরা ব্যবহার করেন ছিনতাই করা পিকআপ ভ্যান বা ট্রাক। রাজধানীর নির্জন জায়গাগুলো ছিল তাঁদের টার্গেট। তাঁদের মধ্যে কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ হোটেল বয় কিংবা কেউ ডেকোরেশনের কাজ করেন।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ একটি ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
কিছুদিন আগে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় চক্রটির দলনেতা শাওন আহমেদ জেলে যান। জেলে বসেই তিনি ডাকাতি-ছিনতাই দলের সদস্য সংগ্রহ করেন। জেল থেকে বেরিয়ে আবার শুরু করেন ছিনতাই-ডাকাতি। রাজধানীর মহাখালী, সাভার, শাহ আলী, মিরপুরের গুদারাঘাট, শেরেবাংলা নগরসহ আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং ভুলতা এলাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই-ডাকাতি করতেন তাঁরা।
গ্রেপ্তার শাওন আহমদের নেতৃত্বে ছিনতাই করতেন জাহিদুল ইসলাম, ইয়ামিন, হৃদয় ও বাবুল। রাতে তাঁরা নির্দিষ্ট জায়গায় মিলিত হয়ে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই ও ডাকাতি করতেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ছিনতাই-ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ, ১টি চাপাতি, ৩টি ছুরি ও ১১টি মুঠোফোন জব্দ করে ডিবি পুলিশ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা-ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি ভোর সোয়া চারটার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এলাকায় ছয়-সাতজন ডাকাত একটি পিকআপ দিয়ে দুই ব্যক্তির গতি রোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মুঠোফোনসহ টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলার ছায়া তদন্তে নেমে ডিবির লালবাগ বিভাগ ছিনতাইকারী এই চক্রকে শনাক্ত করে। তিনি বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ডিমবাহী একটি পিকআপ নরসিংদী থেকে ঢাকায় আসছিল। পথে নারায়ণগঞ্জে গাউছিয়া উড়ালসড়ক এলাকায় ওই পিকআপের চালক নূর মোহাম্মদ ও পথচারী মো. রিপনকে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে তারা ২২ হাজার ডিমসহ পিকআপ, ৫২ হাজার টাকা, চারটি মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মো. রিপন ও নূর মোহাম্মদকে স্থানীয় লোকজন একটি হাসপাতালে নিয়ে যান।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার আসামিরা রাজধানী এবং আশপাশের এলাকা থেকে পিকআপ বা ছোট মাহেন্দ্র ট্রাক ছিনতাই করেন। ছিনতাই করা ওই যানবাহনের মাধ্যমে রাত ১২টার পর তাঁরা হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ছিনতাইকারী। রাজধানীর মহাখালী, সাভার, শাহ আলী, মিরপুরের গুদারাঘাট, শেরেবাংলা নগরসহ আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং ভুলতা এলাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই-ডাকাতি করতেন তাঁরা।
চকবাজার থানায় করা মামলার তদন্তে জানা যায়, ওই ডাকাতির ঘটনায় সাতজন অংশ নেন, যার মধ্যে উল্লিখিত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তসহ এ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্য মামলা রয়েছে। কিছুদিন আগে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় চক্রটির দলনেতা শাওন আহমেদ জেলে যান। জেলে বসেই তিনি ডাকাতি-ছিনতাই দলের সদস্য সংগ্রহ করেন। জেল থেকে বেরিয়ে আবার শুরু করেন ছিনতাই-ডাকাতি। তিনি সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার রাতে আবার গ্রেপ্তার হন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটলেও পুলিশে অভিযোগ হয় খুবই কম। আবার কোনো চক্র গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেশ অভিযোগ আসে। মহানগর এলাকাসহ এর আশপাশে এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করছি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত সিসিটিভি মনিটরিং করছি। তবে অভিযোগ না এলে তো তদন্তকাজও ব্যাহত হয়।’