দ. আফ্রিকায় ডাকাতের আগুনে প্রাণ গেল বাংলাদেশির

ইমরান খলিফা। ছবি: সংগৃহীত
ইমরান খলিফা। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকায় ডাকাতদের দেওয়া পেট্রলের আগুনে পুড়ে এক যুবক মারা গেছেন। বুধবার ভোরে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরেক বাংলাদেশি গুরুতর আহত হয়েছেন।

নিহত ওই যুবকের নাম ইমরান খলিফা (২৯)। তিনি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দ্বিতীয়াখণ্ড ইউনিয়নের মুজাফফরপুর খলিফাকান্দি এলাকার দুদুমিয়া খলিফার ছেলে। আহত যুবকের নাম আবদুর রহিম (২৮)। তিনিও শিবচর উপজেলার বাসিন্দা।

ইমরানের স্বজনের সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে জমিজমা বিক্রি করে ইমরানকে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠান তাঁর মা–বাবা। সেখানে গিয়ে অরেঞ্জফার্ম এলাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন ইমরান। সোমবার রাতে একদল ডাকাত এসে হানা দেয় ইমরানের দোকানে। ডাকাতি শেষে দোকানের সাটার নামিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এ সময় ইমরান ও আবদুর রহিম দোকানের ভেতর আটকা পড়েন। স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ইমরান ও আবদুর রহিম গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ইমরান মারা যান। অন্যদিকে আহত রহিমের একই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

একটু সুদিনের আশায় নাড়িছেঁড়া ধনকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই বিদেশের মাটিতে ছেলের মৃত্যুতে মা এখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শিবচর, মাদারীপুর, ২৩ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো
একটু সুদিনের আশায় নাড়িছেঁড়া ধনকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই বিদেশের মাটিতে ছেলের মৃত্যুতে মা এখন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শিবচর, মাদারীপুর, ২৩ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ইমরানের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে ইমরানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চারপাশে মানুষের ভিড়। ইমরানকে হারিয়ে মা ও বোনেরা যেন দিশেহারা। ছেলেকে ফিরে পেতে মায়ের চাপাকান্না দেখে অন্যদের চোখেও পানি ঝরছে।

ইমরানের মা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ইমরান মরে নাই, ওরে তোমরা যেখান থিকা পারো আমার বুকে ফিরাইয়া দাও। আমার সোনার ছেলে এভাবে মরতে পারে না। ওরে তোমরা ফিরাইয়া দাও।’

ইমরানের এক বোনের স্বামী রুবেল মাতুব্বর বলেন, ‘অনেক টাকা দেনা করে ইমরানকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। সে দেড় বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এখনো প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দেনা। ইমরানের স্বপ্ন ছিল দেনা শোধের পর ছোট বোনদের বিয়ে দেবে। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে গেল।’

দক্ষিণ আফ্রিকায় ইমরানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। শিবচর, মাদারীপুর, ২৩ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো
দক্ষিণ আফ্রিকায় ইমরানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। শিবচর, মাদারীপুর, ২৩ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো

ইমরানের বাবা দুদু মিয়া খলিফা বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে আমার মরার কথা কিন্তু তার আগেই আমার পোলাডারে হারাইলাম। ওর মুখটা শেষবারের মতো দেখতে চাই। ওর লাশ তাড়াতাড়ি যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়, সরকারের কাছে এইটাই আমার দাবি।’

ইমরানের বোন রোজিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চার বোনের একমাত্র ভাই ছিল ইমরান। ডাকাতরা ওরে বাঁচতে দিল না। এখন আমাদের পরিবারের কী হবে? কীভাবে ধারদেনা শোধ করব? আমার মা ছেলেকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবে? আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল।’

স্থানীয় বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, ‘সংসারটি ইমরানই চালাত। এখন সরকার যদি লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয় ও একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো পরিবারটি বেঁচে থাকার ভরসা পাবে। নয়তো পরিবারটিকে দেখার মতো কেউ নেই।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের পরিবার আমাদের কাছে আবেদন করলে, আমরা লাশটি দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করব। আর পরিবারকে আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করব।’