দেবোত্তর পুকুর দখলের চেষ্টা

নেত্রকোনা
নেত্রকোনা

নেত্রকোনার বারহাট্টার রায়পুর এলাকায় ‘শ্রী গোপীনাথ বিগ্রহ মন্দির’ নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দেবোত্তর সম্পত্তির পুকুর দখলে নেওয়ার চেষ্টায় পুকুরের পানির ওপর বাঁশ দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী মণ্ডপ ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পুকুরপাড়ের দুটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মন্দিরের সেবায়েত সুমন দত্ত গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, রায়পুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা-অর্চনার জন্য ১৯৩৭ সালে শ্রী গোপীনাথ বিগ্রহ মন্দির নির্মাণ করেন। ওই বছর গ্রামের তৎকালীন জমিদার হরেন্দ্রনাথ মজুমদার মন্দিরের পূজাসহ সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেবতার নামে বেশ কিছু জমি দান করেন। জমিগুলোর মধ্যে ১ দশমিক ৪ একর পুকুর রয়েছে। জমিদানের পর থেকে মন্দিরের সেবায়েতরা ওই জমি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। সম্পত্তির উৎপাদিত ফসল ও অন্যান্য আয় দিয়েই সারা বছর মন্দিরের পূজা, কীর্তনসহ বিভিন্ন ধরনের উৎসব পরিচালনা করা হয়।

বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন সুমন দত্ত মজুমদার নামে গ্রামের এক ব্যক্তি। তিনিই দেবোত্তর সম্পত্তি দেখভাল করছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই সম্পত্তি বারইতাতিয়র গ্রামের আবদুল মজিদসহ একটি চক্র দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। ভূমি জরিপে মন্দিরের এসএ ৩৫২৫ দাগের ১ দশমিক শূন্য ৪ একর পুকুরসহ অন্যান্য দাগের কিছু জায়গা ভুলবশত ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে চক্রটি কিছু ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পুকুরটি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে মন্দিরের সেবায়েত বাদী হয়ে নেত্রকোনা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে আদালত ২০১৮ সালের ২৭ জুন জায়গাটি পুনরায় মন্দিরের নামে দিয়ে দেন। কিন্তু আবদুল মজিদ ও তাঁর লোকজন পুকুরটি নিজের দাবি করে এর চারদিকে জাল দিয়ে বেড়া দিয়ে রাখেন।

এ ঘটনায় মন্দির পরিচালনা কমিটির লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তখনকার ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমানসহ উভয় পক্ষের শতাধিক লোকজনের উপস্থিতিতে এক গণশুনানির মাধ্যমে পুকুরটি উন্মুক্ত করেন। এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুকুরের ওপরে মন্দিরের পূজা কমিটির সদস্যরা বাঁশ-কাঠ দিয়ে ‘হংস পদ্ম’ নামে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন। মঞ্চটিতে সরস্বতী দেবীর পূজা-অর্চনা করা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার আবদুল মজিদ তাঁর লোকজন নিয়ে বড় এ মঞ্চটি ভেঙে পুনরায় পুকুরে মাছ ধরাসহ দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে দুটি গাছ কেটে নেন।

মন্দিরের সেবায়েত সুমন দত্ত গতকাল সন্ধ্যায় শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় জেলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের লিখিত অভিযোগের অনুলিপি সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, মন্দিরের সামনে ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরের পানিতে যুগ যুগ ধরে রায়পুর ছাড়াও লাগুয়া গ্রাম পাইকপাড়া, বারইতাতিয়র এলাকার লোকজন গোসলসহ গৃহস্থালির কাজ করে আসছেন। কিন্তু আবদুল মজিদ বারবার চক্রান্ত করে পুকুরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি পানির ওপর নির্মিত পূজার হংস পদ্ম মঞ্চটি ভেঙে দিয়েছেন। দুটি গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।

মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে আবদুল মজিদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করতে বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।’