ধরা পড়ে শুধু ছোটরা, আড়ালে থাকে বড়রা

২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭ হাজার মানুষ একাধিক এনআইডি করার চেষ্টা করেছেন।

  • এনআইডি জালিয়াতিতে জড়িত থাকায় ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’। তঁারা ‘আউটসোর্সিং’–এর মাধ্যমে ইসিতে কাজ করতেন।

  • ইসি বলছে, ৯২৭ জন উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তঁাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র । ছবিটি প্রতীকী।

আঙুলের ছাপ, চোখের মণির (আইরিশ) প্রতিচ্ছবি নেওয়াসহ সাতটি ধাপ পার হওয়ার পরই একজন ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পান। আইন অনুযায়ী একজনের একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার সুযোগ নেই। দেশের নিবন্ধিত সব ভোটারের আঙুলের ছাপ ও ব্যক্তিগত তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে (তথ্যভান্ডারে) সংরক্ষিত রয়েছে। কেউ দ্বিতীয়বার ভোটার হতে চাইলে তা সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে জালিয়াতির মাধ্যমে অনেকেই একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নিচ্ছেন।

এনআইডির তথ্যভান্ডার এবং ভোটার নিবন্ধনের কাজটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা ফাঁক গলে কীভাবে একজন ভোটার একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একইভাবে প্রশ্ন উঠেছে সার্ভারের পদ্ধতিগত নিরাপত্তা নিয়ে। সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে। ভোটার নিবন্ধনের (হালনাগাদ বাদে) জন্য আবেদন করতে হয় ইসির থানা কার্যালয়ে। সেখানে কর্মরত ‘ডাটা এন্ট্রি অপারেটর’ নিবন্ধনের তথ্য অস্থায়ী সার্ভারে যুক্ত করেন (আপলোড)। তবে তাঁরা ইসির নিজস্ব কর্মী নন। তাঁরা ‘আউটসোর্সিংয়ের’ (প্রকল্পের আওতায় অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসা কর্মী) মাধ্যমে আসা। রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই কাজ কেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ইসির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা বা দায়িত্বে অবহেলা না থাকলে শুধু ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের পক্ষে এত বড় জালিয়াতি করা সম্ভব নয় বলে ইসিতেও আলোচনা আছে। জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ক্ষেত্রে ইসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। এখনো এ–সংক্রান্ত তদন্ত শেষ হয়নি। তাই কারা জড়িত, সেটি এখন পর্যন্ত আড়ালে রয়ে গেছে।

ইসি সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭ হাজার জন একাধিক এনআইডি করার চেষ্টা করেছেন, এটি ইসির সার্ভারে ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৯২৭ জন উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের এনআইডি ‘লক’ (অকার্যকর) করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইতিমধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।

সর্বশেষ গত আগস্টে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জালিয়াতিতে ধরা পড়া জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার বিষয়টি জানা যায়। তাঁর বিরুদ্ধে ইসি মামলা করেছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতে ইসির তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নাগরিকদের একটি অংশ অজ্ঞতাবশত দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি করার জন্য মানুষ একাধিক এনআইডি করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এ দেশের নাগরিক সেজে বিদেশ যাওয়ার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি করেন। এর বাইরে ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্যাংকঋণ নেওয়া, অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ; অনৈতিকভাবে অন্যের পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করা; বয়স কমানো ও স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে সরকারি চাকরিতে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা, তথ্য পরিবর্তন করে বিদেশ যাওয়ার জন্য অনেকে জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি করে থাকেন বা করার চেষ্টা করেন।

এখন পর্যন্ত এনআইডি জালিয়াতির ক্ষেত্রে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের নামই বেশি এসেছে। ২০১৩ সাল থেকে গত আট বছরে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকায় ইসির নির্দেশে ৩০ জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর বাইরে সাতজন ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট’ কর্মী, একজন মেসেঞ্জার ও একজন সহকারী পরিচালককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ইসির আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইয়া) প্রকল্পের কর্মী ছিলেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন ও বিতরণের কাজ চলছে।

এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় সর্বশেষ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে দুজন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দুটি থানা কার্যালয়ের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি তৈরি করে দিতেন এই দুজন।

জালিয়াতির মাধ্যমে এনআইডি করার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ধরা পড়েছিল গত বছর চট্টগ্রামে। সেখানে একটি চক্র রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরি করে দিত। ওই ঘটনায়ও তিনজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছর কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা এম এ ওয়াদুদের পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র নকল করে তাঁদের তিনটি জমি কেনাবেচা করে একটি চক্র। গত মাসে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় করা মামলায় ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয় প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত কমিটির কাছে এ ধরনের আরও বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। ইসিও এ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করছে।

জালিয়াতির বিভিন্ন ঘটনা ধরা পড়ার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর একটি অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা দ্রুত জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। দুর্নীতি, জালিয়াতির সুস্পষ্ট তথ্য ও প্রমাণ দিতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানানো হয়।

জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসির কর্মীদের যোগসাজশ আছে। সেটা ইসিকেই খুঁজে বের করতে হবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার

যেভাবে হয় জালিয়াতি

ইসির কর্মকর্তারা জানান, ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্য এবং আঙুলের ছাপ সংগ্রহের পর তা এন্ট্রি (অনলাইনে অস্থায়ী সার্ভারে পাঠানো) দিয়ে থাকেন। একজন ব্যক্তি ভোটার হতে হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বাইরে এখন ১০ আঙুলের ছাপ এবং আইরিশ দিতে হয়। শুরুর দিকে দুই হাতের চার আঙুলের (দুই হাতের বৃদ্ধা ও তর্জনী) ছাপ নেওয়া হয়েছিল। আঙুলের ছাপ ইতিমধ্যে ইসির সার্ভারে আছে কি না, তা ক্রস ম্যাচ (যাচাই) করা হয়। কিন্তু ইসির থানা কার্যালয়গুলো সরাসরি ক্রস ম্যাচের কাজটি করতে পারে না। নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় থানা কার্যালয়কে সরাসরি ওই সার্ভারে ঢোকার অধিকার দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তারা অন্যান্য তথ্য যাচাই করে থাকেন।

পরে থানা কার্যালয় থেকে একটি অস্থায়ী সার্ভারে ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তির প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করা হয়। সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেন্দ্রীয় সার্ভারে ক্রস ম্যাচের কাজটি করা হয়। ইসির সার্ভারে থাকা ছাপের সঙ্গে কোনো ছাপ না মিললে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ পরিচয়পত্র করার অনুমোদন দেয়। এরপর কার্ড প্রিন্ট করা যায়। আর আঙুলের ছাপ আগে থেকেই সার্ভারে থাকলে কিছু প্রক্রিয়া শেষে ওই ব্যক্তির মূল পরিচয়পত্র ‘ব্লক’ করে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ক্রস ম্যাচ হওয়ার পরই একজন ব্যক্তির পরিচয়পত্র পাওয়ার কথা।

ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা দ্বিতীয়বার জাল পরিচয়পত্র করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আঙুলের ছাপ ব্যবহার না করে অন্য কারও ছাপ নিয়ে থাকেন। অথবা যে ছয়টি আঙুলের ছাপ আগে নেওয়া হয়নি, শুধু সেগুলো নিয়ে থাকেন।

সম্প্রতি ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে উদ্ধৃত করে পুলিশ বলেছিল, অপারেটররা প্রয়োজনীয় সব তথ্য, আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয়পত্র অনুমোদনের জন্য ইসিতে পাঠিয়ে দিতেন। এরপর এনআইডি অনুমোদন হতে সময় লাগত সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মিনিট। একই ব্যক্তির আরেকটি পরিচয়পত্র আছে কি না, তা যাচাই হতে মাস দুয়েক সময় লেগে যায়। এ সময় জালিয়াতি করে ঋণ নেওয়া হয়ে যায়।

ইসি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া শেষ করলেও ২০ মিনিটের মধ্যে পরিচয়পত্র অনুমোদন হওয়ার কথা নয়। এভাবে হয়ে থাকলে এর সঙ্গে পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ এবং কারিগরি শাখার কারও না কারও সংশ্লিষ্টতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী কারও তদবিরেও যাচাই করার আগে দ্রুততার সঙ্গে পরিচয় নিবন্ধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।

সময় লাগছে তদন্তে

গত বছরের আগস্টে চট্টগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়টি ধরা পড়ে। বেশ কয়েক বছর ধরে একটি চক্র টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি দিয়ে আসছিল। অন্তত ৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গাকে এনআইডি করে দিয়েছিল ওই চক্র। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আদালত সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার মামলায় গ্রেপ্তার ১৫ জনের মধ্যে ১১ জন ইসির কর্মচারী। তাঁদের পাঁচজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দিতে ৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ঘটনার সঙ্গে ইসির কর্মচারীদের বাইরেও অনেকের জড়িত থাকতে পারে। তাঁরা কীভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ নিয়েছেন, সেটা বের হলে ইসির বাইরেও এ চক্রের কেউ আছে কি না, তা পরিষ্কার হবে।

এ ঘটনা নির্বাচন কমিশনও তদন্ত করছে। তবে এক বছরেও সে তদন্ত শেষ হয়নি। প্রাথমিক অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।

তদন্তে সময় লাগার বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে তদন্তকাজ কিছুদিন থেমে ছিল। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। ওই ঘটনায় জব্দ কম্পিউটারের কিছু হার্ডওয়্যার ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের যাঁদের পরিচয়পত্র করা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্র ধরে অনুসন্ধান হচ্ছে। এ চক্রে কারা, কীভাবে এ কাজ করেছে—এসব সুনির্দিষ্টভাবে বের করতে একটু সময় লাগছে। কুষ্টিয়ার ঘটনাও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিরাপত্তা, পাহারা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, পরিবহনসেবা, ডাক বিতরণ—এ ধরনের ১১টি কাজ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার কথা বলা আছে আউটসোর্সিং–সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালায়। তাতে বলা হয়েছে, কোনো সেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গোপনীয়তা ও সরকারি স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সংশ্লিষ্ট সেবা অর্থ বিভাগের সম্মতি সাপেক্ষে নীতিমালার আওতাবহির্ভূত রাখতে হবে। তবে ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কাজে প্রায় এক যুগ ধরে চলে আসছে আউটসোর্সিং।

সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র উইংয়ের জনবলকাঠামো ৭১ জনের। জনবল আছে ৪৮ জন। এত কম জনবল দিয়ে সারা দেশে সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। বিধিবিধান দেখেই সরকার আউটসোর্সিংয়ের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের সবাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, এমন নয়। গুটিকয়েক কর্মী অনৈতিক কাজে জড়িত। তাঁদের চাকরিচ্যুতির পাশাপাশি মামলা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বছর থেকে আইডিইয়া-২ প্রকল্প করা হচ্ছে। সেখানেও আউটসোর্সিং থাকছে। তবে স্পর্শকাতর জায়গায় আউটসোর্সিংয়ের লোকবল রাখা যাবে না। অনিয়ম বন্ধে এনআইডি উইংয়ের সক্ষমতা, লোকবল বাড়ানো ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা হচ্ছে।

পদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসির সমন্বয় সভায় এনআইডি জালিয়াতির বিষয়টি আলোচনায় আসে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং এনআইডি অনুবিভাগ থেকে নজরদারি জোরদার করতে হবে।

এ ছাড়া ভোটার নিবন্ধন পদ্ধতি পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ইসি। এখন কেউ ভোটার হতে গেলে থানা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করবেন, কাগজপত্র যাচাই করে নিবন্ধনের অনুমোদন দেবেন। এরপর আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে। স্ক্যান করা সব কপি আপলোড করার সময় কর্মকর্তাকে ডিজিটাল সই দিতে হবে।

এ ছাড়া মাঠপর্যায়ের কাজ তদারকিতে অঞ্চলভিত্তিক ১০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের আরও জবাবদিহির আওতায় আনা, মাঠপর্যায়ের সব কার্যালয় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসির এনআইডি উইং।

জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজটি দেশে প্রথম শুরু করেছিল এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। ওই কমিশনের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তখন এনআইডির জন্য একটি জনবলকাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। এত বছর পর্যন্ত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজটি চলার কথা নয়। ইসির নিজস্ব লোকবল দিয়েই কাজটি হওয়া উচিত।

তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসির কর্মীদের যোগসাজশ আছে। সেটা ইসিকেই খুঁজে বের করতে হবে।