ধর্ষণের মামলা করে চার মাস ধরে একঘরে

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

বগুড়ার ধুনট উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অপহরণের পর কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা করায় কিশোরীর পরিবারকে চার মাস ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে।

ওই ঘটনায় এত দিনেও আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ধুনট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহসানুল হককে মঙ্গলবার রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালাকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশ আজ শনিবার পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ইউপি সদস্য ফজলুল হক (৪২), আবদুল মান্নান (৪০) ও সাথী খাতুন (৩৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, ফজলুল হক ও মাসুদ রানা (৩৫) ওই কিশোরীকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। গত ১৬ জুলাই মেয়েটি নানার বাড়ি যাচ্ছিল। এ সময় মাসুদ ও তাঁর সহযোগীরা মেয়েটিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যান। এ ঘটনায় মেয়েটির মা গত ১২ আগস্ট মাসুদ, ফজলুলসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

সমাজ থাইকা বাদ দেওয়ায় গত কোরবানির দিন এক টুকরো মাংস আমাইগোরে প্যাটে যায় নাই। ছোট্ট পোলাডা মাংসের জন্য কান্দিছে। গরিব মানুষ, তাই কিইনা খাওয়াইতেও পারি নাই।
কিশোরীর মা

অপহরণের ১ মাস ৯ দিন পর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সিরাজগঞ্জ থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন তার মা–বাবা। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য স্থানীয় মাতবর সোলাইমান আলী, আবু সাইদ, আজাহার আলী ও আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে ২৮ জুলাই সালিস বৈঠক করা হয়। সালিসে মেয়েটির পরিবারকে ২ লাখ টাকা দিয়ে মামলা তুলে নিতে বলা হয়। তা মেনে না নেওয়ায় মেয়েটির পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।

মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, ‘সমাজ থাইকা বাদ দেওয়ায় গত কোরবানির দিন এক টুকরো মাংস আমাইগোরে প্যাটে যায় নাই। ছোট্ট পোলাডা মাংসের জন্য কান্দিছে। গরিব মানুষ, তাই কিইনা খাওয়াইতেও পারি নাই। গ্রামের মানুষ আমাইগরে বাড়িতে আইসে না। ধার-দেনা পর্যন্ত দেয় না। মাইয়াডা উদ্ধার করার পর থাইকা ঠিকমতো খাওন-দাওন করে না। খালি কান্দে।’

সালিসের বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও সোলাইমান আলী ও আবু সাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আজহার আলী ও আফজাল হোসেন বলেন, তাঁরা সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পরিবারটিকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তাঁদের মতামত নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার শনিবার বলেন, ‘পরিবারটিকে একঘরে করে রাখার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘটনাটি জানার পর তিন-চার দিন আগে আমি লোকজন ডেকে পরিবারটির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ তবে শুক্রবার সন্ধ্যায়ও মেয়েটির মা তাঁদের একঘরে করে রাখার বিষয়টি জানিয়েছেন।

একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হলে সমাজপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃপা সিন্ধু বালা, ওসি, ধুনট থানা

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় এত দিনেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞার নির্দেশে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসানুল হককে মঙ্গলবার রাতে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর শুক্রবার সকালে আবদুল মান্নান ও সাথী খাতুনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ সকালে ইউপি সদস্য ফজলুল হককে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মেয়েটির পরিবারকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হলে সমাজপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’