নাটোরে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আদালত
প্রতীকী ছবি

ফাতেমা খাতুনকে (১৯) গলা টিপে হত্যার দায়ে স্বামী রুবেল হোসেনকে (২৬) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহা. ইমদাদুল হক এ দণ্ডাদেশ দেন। রুবেল হোসেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শিবপুর গ্রামের খোকন মুন্সির ছেলে।

আদালত মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি আসামিকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। দণ্ডিত অর্থ জেলা কালেক্টরেটকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদায় করে তা নিহত ফাতেমা খাতুনের মা–বাবাকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আনিসুর রহমান বলেন, রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাঁকে নাটোর কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার তিন বছরের মধ্যে এ রায় ঘোষণা করা হলো। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১০ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করা হয়। সাক্ষ্য–প্রমাণে আসামির বিরুদ্ধে তাঁর নববিবাহিত স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে গলা টিপে হত্যা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে হাইকোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে আসামিকে গলায় রশি লাগিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে আসামি আগামী সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এর আগে অভিযোগ গঠনের সময় আদালত মামলার অপর তিন আসামি জুয়েল হোসেন (২৬) খোকন মুন্সি (৫৫) ও বেবী বেগমকে (২২) অব্যাহতি দিয়েছিলেন।

মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, নিহত ফাতেমা খাতুনের সঙ্গে আসামি রুবেল হোসেনের বিয়ে হয় ২০১৭ সালের ২৭ জুন। বিয়ের এক মাস পার হতেই দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে রুবেল হোসেন স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নয়টার সময় তিনি শ্বশুরবাড়িতে খবর পাঠান যে তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে বাবা ও বোনেরা গিয়ে মৃতদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পান। এ ঘটনায় বড় বোন আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে রুবেল হোসেন, তাঁর ভাই জুয়েল হোসেন, বাবা খোকন মুন্সি ও ভাইয়ের স্ত্রী বেবী বেগমকে আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন। বড়াইগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ময়নাতদন্তে ফাতেমাকে গলা টিপে হত্যা করার বিষয়টি উঠে আসে।

মামলার বাদী আকলিমা খাতুন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিরা আমার বোনকে হত্যা করার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। আদালতে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি।’ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল রায়ে সন্তুষ্ট না। তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।