ঈশ্বরগঞ্জে ৭৯ বস্তা চাল জব্দ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের খাদ্যগুদামে গতকাল মঙ্গলবার ৭৯ বস্তা (৩৯৫০ কেজি) অতিরিক্ত চালের মজুত পাওয়া গেছে। এসব চাল অবৈধভাবে সরকারের বোরো সংগ্রহের নামে সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

বোরো সংগ্রহ কার্যক্রমের অধীনে তালিকাভুক্ত চালকলের মালিকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে চাল কেনে সরকার। চালকলের মালিকদের কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ করে এ চাল সরবরাহ করার কথা।

আঠারবাড়ি খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার দিকে আবদুল মতিন নামের একজন চাল ব্যবসায়ী কয়েকটি ট্রলিতে করে ৭৯ বস্তা চাল খাদ্যগুদাম চত্বরে পৌঁছান। ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলীর নির্দেশে শ্রমিকেরা চালগুলো গুদামের এক নম্বর ভবনের ভেতরে নিয়ে স্তূপ করে রাখেন। ফরিদা রাইস মিল নামের একটি কলের নামে এসব সরবরাহ করা হয়।

খাদ্যগুদামের কয়েকজন জানান, গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন আঠারবাড়ি খাদ্যগুদামের ১ নম্বর ভবন আকস্মিকভাবে পরিদর্শনে আসেন। তিনি এ ভবনে সরকারি বস্তা ছাড়া চালের মজুত দেখতে পান। এ চালের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৯৫০ কেজি। এসব চাল জব্দ করে ১ নম্বর গুদাম সিলগালা করেন তিনি। তিনি এ বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তা আশরাফের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান। আজ বুধবার ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য খাদ্য ভবন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আঠারবাড়ি গুদামে আসেন।

আজ বেলা দেড়টার দিকে আঠারবাড়ি খাদ্যগুদামে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর গুদামটি সিলগালা। গুদাম চত্বরে দাঁড়ানো ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন। তাঁকে বিমর্ষ অবস্থায় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশরাফ উদ্দিন বলেন, স্থানীয় একটি চক্র তাঁকে হুমকি ও ভয় দেখিয়ে ফরিদা রাইস মিলের নামে ৭৯ বস্তা চাল গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। হুমকি দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনকে জানাননি কেন—এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এইচ এম কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, গুদামে থাকা চালের মজুতের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে হুমকি বা ভয় দেখানোর বিষয়ে খাদ্য কর্মকর্তা তাঁকে বা উপজেলা প্রশাসনকে আগে কিছু জানাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবদুল মতিনসহ আঠারবাড়ি এলাকার তিনজনের একটি চক্র গুদামে অবৈধভাবে চাল সরবরাহ করেন। চালের অতিরিক্ত মজুত জব্দ হওয়ার ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এই তিন ব্যক্তি গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ।

যে ফরিদা রাইস মিলের নামে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করা হয়েছে, সেটি আঠারবাড়ি রায়ের বাজার টিঅ্যান্ডটি সড়কে অবস্থিত। সেখানে গেলে কলটির মালিক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এ ধরনের কাজে যাঁরা তাঁর মিলের নাম জড়িয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তাঁর মিল ৫৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আঠারবাড়ি এলাকার চালকলের একজন মালিক বলেন, চাল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কলের মালিকেরা বিভিন্ন অসাধু উপায় অবলম্বন করে থাকেন। তাঁরা ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারদরের চেয়ে কম দামে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের চাল কিনে বস্তা বদল করে খাদ্যগুদামে সরবরাহ করে থাকেন। এটি এখন বহুল প্রচলিত।

এ ব্যাপারে ইউএনও বলেন, অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চাল সরবরাহের বিষয়টি আরও কঠোরভাবে তদারক করা দরকার। ফরিদা রাইস মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করে চুক্তি বাতিলের ব্যবস্থা নিতে এবং আবদুল মতিন ও অন্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার জন্য খাদ্য বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।