নির্যাতন না করার কসম খেয়ে হত্যা করলেন স্ত্রীকে

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

স্ত্রী পরকীয়া করেন—এমন সন্দেহ ছিল জাকির হোসেনের। এ সন্দেহ থেকে প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। স্বামীর এ নির্যাতন সইতে না পেরে বাপের বাড়ি চলে যান শাহিনা আক্তার। এরপর নির্যাতন করবেন না বলে কসম খেয়ে জাকির স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনেন। দুদিন না যেতেই স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। এতেই ক্ষান্ত হননি, যাকে নিয়ে তাঁর সন্দেহ, তাঁর ওপরও হামলা করেন ছুরি নিয়ে। এ সময় জাকিরসহ আহত হন তিনজন।

গতকাল রোববার গভীর রাতে বান্দরবানে লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের তেলুনিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

লামা থানার পুলিশ জানিয়েছে, আজ সোমবার শাহিনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জাকির হোসেনসহ আহত তিনজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (তেলুনিয়াপাড়া এলাকা) সদস্য কামাল হোসেন বলেন, গভীর রাতে জাকির বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু করেন। তাঁর সন্দেহ, প্রতিবেশী মিজানুর রহমানের সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এ সময় জাকির ক্ষিপ্ত হয়ে কিরিচের মতো ধারালো ছুরি দিয়ে শাহিনা আক্তারের হাত, পেট ও পিঠে আঘাত করেন। পেটে ছুরি মারার সঙ্গে সঙ্গে শাহিনা আক্তারের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তাঁদের ১০ বছরের এক মেয়ে ও ৭ বছরের এক ছেলে রয়েছে।

জাকির হোসেনের ভাই মো. হারুন জানিয়েছেন, স্ত্রীর ওপর আঘাত করার পর জাকির পাশের একটি খামারে থাকা মিজানুর রহমানের কাছে যান। তখন মিজানুর রহমানের সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। জাকির ছুরি নিয়ে মিজানুরের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় মিজানুর এবং সোহাগ নামের একজন বাধা দিলে তাঁরা তিনজনই গুরুতর জখম হয়ে আলুখেতে পড়ে যান। পরে পাড়ার লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সংবাদ দেন।

আজিজনগরের গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাবিলদার মো. ইলিয়াস জানিয়েছেন, তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছেন, জাকির হোসেন ও স্ত্রী শাহিনা—দুজনেই পরস্পরকে পরকীয়ার সন্দেহ করেন। এ জন্য জাকির প্রায় সময়ই স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতেন। এ কারণে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাকির হোসেনের মামা শামসুল আলম বলেছেন, জাকির ও মিজানুর রহমান দুজনই ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলচালক। দুজনেই মাদকাসক্ত। জাকিরের নির্যাতনে শাহিনা বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন। দুই দিন আগে নির্যাতন করবেন না কসম খেয়ে শাহিনাকে নিয়ে আসেন জাকির। গতকাল রাতেও জাকির ও মিজান একসঙ্গে নেশা করেছিলেন। বাড়ি ফিরে জাকির হত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল হক জানিয়েছেন, শাহিনার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকারী জাকির হোসেনসহ তিনজনকে প্রথমে কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জাকির ও মিজানুরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।