নেতার ভাই বলে কথা!
পাটগ্রাম পৌরসভার রহমানপুর (শিলেরডাঙ্গা) গ্রামের উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির ভাই আনোয়ারুল ইসলামের হামলায় তিন নারীসহ এক দরিদ্র বর্গাচাষি গুরুতর আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার এ হামলার ঘটনা ঘটে। বর্গাচাষি পরিবারটির পক্ষ হয়ে জমির মালিক আজাদুল ইসলাম মামলার প্রস্তুতি নিলে গত রোববার রাতে আবার তাঁর ওপর হামলা চালান খোদ ছাত্রলীগ নেতা আকতারুল ইসলাম। রাজহাঁস খোঁয়াড়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন বর্গাচাষি আবু তালেব (৩৫), তারঁ স্ত্রী মাহমুদা বেগম (২৮), বোন মোমেনা খাতুন (৪৫) ও শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৫০)। এঁদের মধ্যে গুরুতর আহত আবু তালেব ও মোমেনা খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত রোববার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক বলেন, আবু তালেব বুকে ও কিডনিতে আঘাত পাওয়ায় বারবার বমি করছিলেন। তাঁর অবস্থা গুরুতর। তা ছাড়া তাঁর বোন মোমেনার হাতও ভেঙে যাওয়ায় তাঁদের রংপুরে পাঠানো হয়েছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, আবু তালেবের বাড়ির পাশের ধানখেত কিছুটা নষ্ট। বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ টিনের বেড়া ভেঙে আছে। কিন্তু এসব বিষয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে নারাজ। তবে এ সময় আহত আবু তালেবের মা রহিমা খাতুন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘হামরা গরিব মানষি। মোর একনা ছোয়া (ছেলে)। তায় রিকশা ও মানষির জমি (বর্গা) চাষ করি কোনোমতে সংসার চালায়। ওমার হাঁস (আনোয়ারুল ইসলাম) হামার ধানখ্যাত খায়া (খেয়ে) নষ্ট করি দেয়। আর ওমায় মোর ছোয়াক মারি শেষে করি দেলে। থানাত যাবার হামার কাঁয়ো নাই। হামার পাশোত কাঁয়ো আইসে না ওমার ভয়ে।’
আহত আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘আবু তালেব একজন অসহায় গরিব মানুষ। তাঁকে যেভাবে পিটিয়েছে, তা দেখে নিজের খুব খারাপ লাগছিল। তাই আবু তালেবের পক্ষে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, গত রোববার রাত আটটার দিকে পৌরসভার পূর্ববাজার চৌরাস্তা মোড়ে একটি চায়ের দোকানে তিনি বসে ছিলেন। আকস্মিক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। পরে থানা-পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আবু তালেবের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলামের ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম রাজহাঁস পালেন। কিন্তু সেই রাজহাঁসগুলো প্রতিবেশী আবু তালেবের রোপা আমন খেতের ফসল নষ্ট করছিল। বিষয়টি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পরিবারকে জানালেও তাঁরা কান দেননি। তাই গত শুক্রবার রাতে রাজহাঁসগুলো ধরে নিয়মমতো স্থানীয় খোঁয়াড়ে জমা দেন আবু তালেব। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হামলা চালান আনোয়ারুল।
পাটগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মৌখিকভাবে বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়েছে।