নেত্রকোনায় আদালত পুলিশের কাছ থেকে পালিয়েছেন আসামি

নেত্রকোনায় আদালত পুলিশের কাছ থেকে মিলন মিয়া (৩২) নামে হত্যা মামলার এক আসামি পালিয়ে গেছেন। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের কুড়পাড় এলাকায় জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাতকড়া খুলে তিনি পালিয়ে যান।

ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আটজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আসামির পালিয়ে যাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে কোর্ট পরিদর্শক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আসামির হাত খুব চিকন। তাই হাতকড়া খুলে পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।’

মিলন মিয়ার বাড়ি বারহাট্টা উপজেলার কালিকা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। একটি হত্যা মামলার আসামি হয়ে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে জেলা কারাগারে ছিলেন তিনি। আজ তাঁকে কারাগার থেকে আদালতে হাজিরার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কারাগার ও আদালত পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা ১১টার দিকে হত্যা, মারামারি, মাদক ব্যবসা, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলার ৪৮ জন আসামিকে আদালত পুলিশের একটি দল হাজিরার জন্য আদালতে নিয়ে যায়। এর মধ্যে হত্যা মামলার আসামি মিলন মিয়াকে জেলা ও দায়রা জজ কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার পর মিলন মিয়া হাতকড়া খুলে কৌশলে দৌড়ে পালিয়ে যান।

নেত্রকোনা কারাগারের জেল সুপার আবদুল কুদ্দুছ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘কোর্ট পুলিশের কাছ থেকে মিলন মিয়া নামের এক হত্যা মামলার আসামি পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। এর বেশি কিছু এখনো জানি না।’

পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন সাবইন্সপেক্টর (এটিএসআই) খায়রুল ইসলামসহ আটজন পুলিশকে দায়িত্বের অবহেলার জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়ায় ওই আসামির নামে আরও একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে গত ৯ মে জেলা শহরের কুখ্যাত চোর মেহেদি হাসান ওরফে আলম চোরা (৩২) দুই কারারক্ষীকে ফাঁকি দিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে হাতকড়া খুলে পালিয়ে যান। তার আগে গত বছরের ১১ অক্টোবর পূর্বধলা থানার শৌচাগার থেকে রুবেল মিয়া (২৬) নামের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যান। তখন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অভি রঞ্জন দেব বলেছিলেন, ‘ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে আসামি রুবেল মিয়া বাথরুমে যান। সেখান থেকে ফোকর দিয়ে সুকৌশলে তিনি পালিয়ে যান। ফোকরের লোহার রডগুলো জং ধরে পুরোনো হয়ে ছিল এবং তাঁর শরীর চিকন হওয়ায় তিনি সহজে পালান।’ তার তিন দিন আগে কলমাকান্দার চত্রংপুরে মাদক মালার আসামি এনামুল মিয়া (২৮) আটকের পর পুলিশকে কামড় দিয়ে পালিয়ে যান।

গত বছরের ৫ মে চুরির মামলায় রিমান্ডের আসামি কলমাকান্দার সাইনুল মিয়া (২৩) কোর্ট পুলিশের কাছ থেকে পালান। তখন নেত্রকোনা সদর কোর্ট পরিদর্শক-২ মো. আবদুল বারি বলেন, ‘সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আদালতের আদেশ কপি আনার সময় নিচে দুজন পুলিশ সদস্য ওই রিমান্ডের আসামির কাছে ছিলেন। সেখান থেকে আসামি সাইনুল সুকৌশলে পালিয়ে যান। তাঁর হাত চিকন থাকায় হাতকড়া ছুটে যায়।’ এরপর ওই বছরের ১৬ জুন দুর্গাপুর কোর্ট পুলিশের কাছ থেকে মাদক মামলার আসামি সোহেল মিয়া (২৪) পালিয়ে যান। ওই ঘটনার পর আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক চিত্তরঞ্জন বলেন, ‘ওই আসামিকে নিয়ে সিএনজি বসার সময় পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যান। তাঁর হাতটি খুব সরু ছিল। তাই হাতকড়া ছুটে যায়।’ এ নিয়ে গত এক বছরে পুলিশের কাছ থেকে ছয়জন আসামি পালিয়ে যান। অবশ্য এই আসামিরা পরে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। আর দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছিল।