পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভাতিজার হাতে চাচা খুন

লাশ
প্রতীকী ছবি

ছেলে নিয়েছিলেন সুদের ওপর টাকা ধার। এর জের ধরে দ্বন্দ্বে অশীতিপর ব্যক্তি নিজের ভাতিজার হাতে খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে জেলা শহরের পূর্ব মেড্ডা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির নাম আবদুল মালেক (৮০)। তিনি জেলা শহরের পূর্ব মেড্ডা স্কুল মসজিদ–সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ভাতিজা মনির মিয়া (৪৫), তাঁর স্ত্রী আসমা বেগম, মনিরের ভাতিজা মতিউর রহমান (৪০) ও মতিউরের স্ত্রী খাদিজা বেগমকে (৩৫) আটক করেছে পুলিশ। মনির ও নিহত আবদুল মালেক সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা।

আবদুল মালেকের ছেলে শরিফ মিয়া প্রায় তিন বছর আগে চাচাতো ভাই মনিরের কাছ থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদে দুই লাখ টাকা ধার নেন। সুদের ওপর নেওয়া পাওনা দুই লাখ টাকা সম্প্রতি শরিফের কাছ থেকে ফেরত চান মনির। এ বিষয়ে কয়েক দিন আগে এলাকায় একটি সালিস হয়।

নিহত ব্যক্তির পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মালেকের ছেলে শরিফ মিয়া প্রায় তিন বছর আগে চাচাতো ভাই মনিরের কাছ থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদে দুই লাখ টাকা ধার নেন। শরিফ প্রতি মাসেই সুদের ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। সুদের ওপর নেওয়া পাওনা দুই লাখ টাকা সম্প্রতি শরিফের কাছ থেকে ফেরত চান মনির। এ বিষয়ে কয়েক দিন আগে এলাকায় একটি সালিস হয়। সালিসে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার বিষয়ে সালিসকারীরা সময় নির্ধারণ করে দেন। গতকাল সোমবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় পাওনা টাকা নিয়ে ভাতিজা মনিরের সঙ্গে মালেকের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় মনির উত্তেজিত হয়ে মালেককে ধাক্কা দেন। এতে তিনি দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার পাশের নালার ওপরের পাকা অংশের ওপর পড়ে আহত হন। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে পরিবারের লোকজন ছুটে গিয়ে মালেককে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমুল হক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাতিজা মনির, তাঁর স্ত্রীসহ চারজনকে আটক করে।

টাকা আমি নিয়েছি, বাবা না। বাবার কী দোষ ছিল? এ জন্য তারা আমার বাবাকে মেরে ফেলল। আমি হত্যার বিচার চাই।
শরিফ মিয়া, নিহত ব্যক্তির ছেলে

নিহত ব্যক্তির ছেলে শরিফ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকা আমি নিয়েছি, বাবা না। বাবার কী দোষ ছিল? এ জন্য তারা আমার বাবাকে মেরে ফেলল। আমি হত্যার বিচার চাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম ও পরিদর্শক (অভিযান) ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ধারের দুই লাখ টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে সোমবার রাতে নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় ওই বৃদ্ধকে ধাক্কা দেন তাঁর ভাতিজা মনির। এতে আহত হয়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনার পরপর অভিযান চালিয়ে মনিরসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। লাশ দাফনের পর পরিবার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।