পান্থপথ-পদচারী সেতুতে নেশাখোরদের আড্ডা

পান্থপথ সিগন্যাল থেকে বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের দিকে আসার পথে নবনির্মিত এই পদচারী সেতুটি বেশির ভাগ সময় ভবঘুরেদের দখলে থাকে। ছবি: মনিরুল আলম
পান্থপথ সিগন্যাল থেকে বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের দিকে আসার পথে নবনির্মিত এই পদচারী সেতুটি বেশির ভাগ সময় ভবঘুরেদের দখলে থাকে। ছবি: মনিরুল আলম

রাজধানীর পান্থপথ সিগন্যাল থেকে বসুন্ধরা শপিং সেন্টারের দিকে আসার পথে নবনির্মিত পদচারী সেতুটি পথচারীরা তুলনামূলক কম ব্যবহার করছেন। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, পথচারীরা এটির ব্যবহারের প্রয়োজন মনে করেন না। এ ছাড়া অধিকাংশ সময় এটি নেশাখোর, ভবঘুরে, ভিক্ষুকদের দখলে থাকে। তাই পথচারীরা এখান দিয়ে পারাপারে নিরাপদও মনে করেন না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল দাবি করেন, ‘ওখানে মাদক গ্রহণের কথা সঠিক না, তারপরও আমরা দেখব।’
সরেজমিনে গত তিন দিন পান্থপথে নির্মিত পদচারী সেতুর ওপর দিয়ে সকাল ও রাতে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটি দেখতে আকর্ষণীয় ও চকচকে হলেও এটি পথচারীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। বরং এর ওপর দিয়ে পথচারীরা যাতায়াত করছেন কম। সকালে একজন দুজন করে যাতায়াত করলেও বিকেলের পর থেকে এটি অনেকটা ফাঁকাই থাকে।
গত শনিবার সকালে দেখা গেছে, পদচারী সেতুর ওপর তিনজন ভবঘুরে অস্থায়ী বিছানা পেতে শুয়ে আছেন। দুই দিকে দুজন ভিক্ষুক এমনভাবে বসে আছেন যে পথচারীরা সেতুর ওপর উঠলেই তাঁদের পা ধরে ফেলছেন। এতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এক পথচারী বলেই ফেললেন, ‘ভিক্ষা চান সমস্যা নাই, গায়ে হাত দেন ক্যান?’
আল-আমিন নামের ওই পথচারী বললেন, তিনি পাশেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ তে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এই সেতুর ওপর দিয়ে যেতেই ইচ্ছা করে না, হয় ভিক্ষুক না হয় নেশাখোরদের আড্ডা লেগেই থাকে।’
সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেছে, পদচারী সেতুর দুই দিকের সিড়িতেই উঠতি বয়সের যুবকেরা হয় গাঁজা সেবন করছেন না হয় সেবনের আগে সেগুলো তৈরি করছেন। এ ছাড়া হাঁটার জায়গাতেও গোল গোল হয়ে বসে বসে গাঁজা সেবন করছেন কেউ কেউ। আর দু-একজন করে যাঁরা সেতুর ওপর উঠছেন তাঁরা বিব্রত হয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছেন। কোনো ছেলে মেয়ে উঠলে গাঁজা সেবন করা যুবকদের অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলতেও দেখা গেল।
বিড়ম্বনার শিকার হওয়া দুই তরুণ-তরুণী জানালেন, তাঁরা বসুন্ধরা সিটিতে শপিং করতে এসেছিলেন। ফেরার পথে রাস্তা পারাপারের সময় পদচারী সেতুর ওপর খানিকটা দাঁড়িয়েছিলেন। এখানে এসে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হলেন, তাতে আর কোনো দিন এখান দিয়ে তাঁরা রাস্তা পার হবেন না।
পদচারী সেতুর নিচে বসেছে নানা ধরনের অস্থায়ী চায়ের দোকান। কয়েকজন দোকানদার ও আশেপাশের দুজন বাসিন্দার কাছে জানা গেল, এই সেতুটি মানুষ তেমন একটা ব্যবহার করে না বা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, এই রাস্তায় মানুষ সবচেয়ে বেশি পারাপার হয় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে। সেখানে ক্রেতারা তো আছেনই, পাশাপাশি অনেক লোক কাজ করেন। যাঁরা এই রাস্তা বেশি পারাপার করেন। কিন্তু পদচারী সেতুটি এমন একটা স্থানে স্থাপন করা হয়েছে যা বসুন্ধরা সিটি থেকে বেশ দূরে। আর এ জন্য মানুষ বসুন্ধরা সিটির সামনে দিয়ে রাস্তার ওপর দিয়ে পারাপার হয়। এই উড়াল সেতু কমই ব্যবহার করে। আর এভাবে ফাঁকা থাকার কারণে এটি নেশাখোর ও ভবঘুরে দের দখলে চলে গেছে। এই মার্কেটে শপিং করতে আসা ফার্মগেটের বাসিন্দা জিনাত হোসেন বলেন, ‘পদচারী সেতুটি বসুন্ধরা সিটির সামনে থাকলে ব্যবহার করা যেতো, কিন্তু এত দূরে তো তাই ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে না।’