পাপুলের উত্থান যেভাবে

কাজী শহিদ ইসলাম
কাজী শহিদ ইসলাম

কুয়েতে মানব পাচারে অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের (রায়পুর-লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে ২০১৬ সালের ঈদুল আজহার আগে গ্রামের মানুষ চিনতেন না। গ্রামের বাড়ির সামনে মায়ের নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান করতে গিয়ে এলাকাবাসীর নজরে আসেন তিনি। দুই হাতে দেদার বিলিয়েছেন টাকা। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন।

শহিদ একা নন, স্বামী–স্ত্রী দুজনই সাংসদ হয়েছেন। তিনি নির্বাচিত আর তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সংরক্ষিত আসনের সাংসদ। দুজনই সাংসদ হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের অনেক প্রভাবশালী নেতার ভূমিকা রয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন। 

শহিদ ইসলাম কুয়েতে গ্রেপ্তার হন গত শনিবার রাতে মানব ও মুদ্রা পাচারের অভিযোগে। তাঁর আগে লক্ষ্মীপুরের মানুষ তাঁকে দানবীর হিসেবেই জানতেন। এলাকার লোকজন জানান, ১৯৮৯ সালে একটি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার (শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে চাকরি নিয়ে কুয়েত যান তিনি। তখন তিনি ছিলেন অনেকটা নিঃস্ব। ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত দখলের কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজী শহিদ আবার কুয়েতে যান। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সহযোগিতা করেন বড় ভাই কাজী মঞ্জুরুল আলম। মঞ্জুরুল কুয়েত বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। 

রায়পুরের মধ্য কেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শামসু প্রথম আলোকে বলেন, ৩০-৩২ বছর আগে গ্রাম ছাড়েন শহিদ। তখন তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। বিদেশে গিয়ে আদম ব্যবসা শুরু করার পর হঠাৎ তাঁর উত্থান হয়েছে। এক বছর আগে গ্রামবাসীর কাছে তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেই পরিচয় এখন আর নেই। 

রায়পুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষকে চাকরি দেবেন বলে কুয়েতে পাঠানো শুরু করেন কাজী শহিদ। কুয়েতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদম ব্যবসায় নামেন তিনি। মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানির নামে তিনি জনশক্তি রপ্তানি শুরু করেন। একসময় এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ছিলেন তিনি। 

>বিদেশে যাওয়ার আগে ছিলেন নিঃস্ব
আদম ব্যবসায় ভাগ্য পরিবর্তন
এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনই সাংসদ।

রায়পুর সরকারি কলেজ–সংলগ্ন তাউয়া পট্টি এলাকায় কথা হয় জাকির হোসেন নামের এক বৃদ্ধের সঙ্গে। তিনি একটি মসজিদ দেখিয়ে দিয়ে বলেন, সংস্কারের জন্য এমপি সাহেব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমপি হওয়ার পর তিনি সব ভুলে গেছেন।

রায়পুর সরকারি কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ রুবেল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদ নির্বাচনের আগে অনেক দানখয়রাত করতেন। সাংসদ হওয়ার পর তা বন্ধ করে দেন। এখন শোনা যাচ্ছে, কুয়েত পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে আটক করেছেন। 

একই এলাকায় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের আগে কাজী শহিদ দুই হাতে টাকা খরচ করেছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন বেশি সুবিধাভোগী। এলাকার কিছু ছেলেকে মোটরসাইকেলও কিনে দেন। তিনি প্রায়ই হেলিকপ্টারে চড়ে এলাকায় আসতেন। 

রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু ভোটের ৯ দিন আগে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। তখন জোট নেতাদের নির্দেশে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলামের জন্য কাজ করি। এমপি হওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেছেন শহিদ। এমপি হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আমাদের বনিবনা আর হচ্ছে না।’