পাবনায় ভেজাল দুধ তৈরি কারবারিরা আবার সক্রিয়

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় ভেজাল দুধ তৈরিতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন একশ্রেণির অসাধু কারবারি। তাঁরা একাধিক বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে ভেজাল দুধ সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সাঁথিয়া উপজেলায় ভেজাল দুধ তৈরি বন্ধে দফায় দফায় অভিযান চালানো হয়। এতে সেখানে ভেজাল দুধ তৈরির অপতৎপরতা অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু তিন-চার মাস ধরে সাঁথিয়ায় ভেজাল দুধবিরোধী তেমন কোনো অভিযান চালানো হয়নি। এ কারণে কারবারিরা আবারও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তবে বেড়া উপজেলায় গত বছর খুব বেশি একটা অভিযান চালানো হয়নি। গত ২১ নভেম্বর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উদ্যোগে উপজেলার হাটুরিয়া ও পেঁচাকোলা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে ভেজাল দুধ তৈরির অপরাধে তিন দুধ ব্যবসায়ীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো অভিযান চালানো হয়নি।

 অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া, জগন্নাথপুর, পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, নাকালিয়া এবং সাঁথিয়ার সোনাতলা, সেলন্দা, নাগডেমরা, মটকা, ক্ষিদিরগ্রাম, চকমধুপুর, শিবরামপুর, তেতুলিয়া, ফেচুয়ান, তালপট্টিসহ বিভিন্ন গ্রামের ৩০ জনের বেশি দুধ ব্যবসায়ী (ঘোষ) ভেজাল দুধ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। গ্রামগুলোতে ভেজাল দুধ তৈরির কাজ চলে সাধারণত ভোর থেকে সকাল আট-নয়টা এবং সন্ধ্যার পর থেকে রাত নয়-দশটা পর্যন্ত।

ভেজাল দুধ তৈরি করতে ঘোষেরা প্রথমে খাঁটি দুধ থেকে সব ননি তুলে নেন। পরে ওই ননি থেকে ঘি তৈরি করা হয়। পাশাপাশি ননিবিহীন দুধে পামঅয়েল অথবা সয়াবিন তেল মিশিয়ে নকল ননি তৈরি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু-তিনজন ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, আধা লিটার খাঁটি দুধের সঙ্গে আধা লিটার পামঅয়েল বা সয়াবিন তেল মেশানো হয়। এভাবেই তৈরি হয় নকল ননি। দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধে কী পরিমাণ ননি আছে তার ভিত্তিতেই দাম নির্ধারণ করে।

জানতে চাইলে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, ননি তুলে নেওয়া হলে দুধের পুষ্টিগুণ লোপ পায়। নকল ননি পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

 পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুর উপজেলা নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান দুধ উৎপাদনকারী এলাকা। এ এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে সরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা এবং বেসরকারি প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক (আড়ং দুধ), প্রাণ, আকিজ (ফার্ম ফ্রেশ), আফতাবসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

 সাঁথিয়ায় ভেজাল দুধবিরোধী বেশ কিছু অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জামালউদ্দিন। তিনি বলেন, অভিযানে আটক ব্যক্তিরা স্বীকার করেন, ভেজাল দুধ খাঁটি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাঁরা বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ সংগ্রহকেন্দ্রে সরবরাহ করতেন।

 তবে একাধিক বেসরকারি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেছেন, নানা পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা দুধ সংগ্রহ করেন। তাঁদের সংগ্রহ করা দুধ শতভাগ খাঁটি।

 বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবদুস সালাম বলেন, ‘ভেজাল দুধের কারবারের সঙ্গে বেড়ায় ১০ থেকে ১২ জনের জড়িত থাকার ব্যাপারে তথ্য পেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে আমার উপজেলায় অনেক ভেজাল দুধ উৎপাদনকারীর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালিয়েছি। এখন নতুন করে কেউ উৎপাদন করছে কি না সে ব্যাপারে আপাতত কোনো তথ্য নেই।’

 সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভেজাল দুধ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান থেমে নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আমরা কয়েকবার অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সঠিক তথ্য-প্রমাণের অভাবে ও হাতেনাতে ধরতে না পেরে সফল হইনি।’

 বেড়ার ইউএনও সামসুন নাহার বলেন, ‘ভেজাল দুধ উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। প্রমাণ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভেজাল দুধ তৈরির ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। শিগগিরই আবারও অভিযান চালানো হবে।’