পুরান ঢাকায় কিশোর রনি খুনের নেপথ্যে ঢোল বাজানোর দ্বন্দ্ব

নিহত কিশোর সিজান
নিহত কিশোর সিজান

পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার বাসিন্দা রোস্তম আলীর দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলের নাম রনি হাসান (১৬)। রাজধানীর নিউমার্কেটের একটি বেল্টের দোকানে সে কাজ করত। গত ৩১ আগস্ট রনিকে লালবাগের বি সি দাস রোডের কাজী মাহমুদের বাড়ির সামনে ফেলে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় রোস্তম আলী ১৩ কিশোরের নাম উল্লেখ করে লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে আট কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে লালবাগ থানা-পুলিশ। মঙ্গলবার সাতজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া এই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আরেক কিশোরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, রনি নামের যে ছেলেটি খুন হয়েছে, তার স্বভাবচরিত্র ভালো বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। যারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই কিশোর অপরাধী।

নিহত কিশোর রনি হাসান
নিহত কিশোর রনি হাসান

এসআই আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ঢোল বাজানো নিয়ে বিরোধের জের ধরে রনি হাসানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ১ মহররম উপলক্ষে গত ৩১ আগস্ট রাতে লালবাগের রহমতউল্লাহ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে কিশোরের একটি দল ঢোল বাজাচ্ছিল। পরে সেখানে কিশোরের আরেকটি দল আসে। তারা ঢোল বাজাতে থাকে। এ সময় ঢোল বাজানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে মারামারির একপর্যায়ে রনি মাটিতে পড়ে যায়। তখন কয়েকজন কিশোর তাকে মারধর করে। এ সময় ১৭ বছর বয়সী লালবাগের এক কিশোর রনির বুকে ছুরিকাঘাত করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

নিহত কিশোর আরিফ
নিহত কিশোর আরিফ

রনি হাসানের বাবা রোস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে রনি আগে মাদ্রাসায় পড়ত। কিছুদিন আগে সে আমাকে বলল, আর সে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করবে না। আমরা গরিব মানুষ। তাই রনিকে নিউমার্কেটের একটা বেল্টের দোকানে কাজে লাগিয়ে দিই। কিন্তু আমার ছেলেটাকে ওরা খুন করে ফেলল। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

রোস্তম আলী পুরান ঢাকার একটা প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, যারা তাঁর ছেলেকে খুন করেছে, তারা সবাই এলাকার বখাটে ছেলে। এলাকায় নানা ধরনের খারাপ কাজের সঙ্গে তারা জড়িত। এসব কিশোরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান রোস্তম আলী।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আট মাসের ব্যবধানে পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ ও বংশালে চার কিশোর খুন হয়েছে। এসব খুনে যারা জড়িত, তাদের প্রায় সবার বয়স ১৮ বছরের নিচে। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব খুন সংঘটিত হয়েছে।

গত ১০ জানুয়ারি বংশালের সিদ্দিকবাজার এলাকায় সৌরভ হোসেন নামের একজন কিশোর খুন হয়।

চলতি বছরের ৭ মার্চ চানখাঁরপুল-সংলগ্ন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে কিশোর সিজান (১৫) খুন হয়। এ ঘটনায় চার কিশোরকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতকে তখন প্রতিবেদন দিয়ে বলে, চকবাজার ও বংশাল এলাকায় সাত–আটটি গ্রুপ আছে। প্রতিটি গ্রুপে সদস্য ৩০ থেকে ৪০ জন। এরা এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।

সিজান খুনের আট দিন পর ১৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলসংলগ্ন ফুটপাতে আরিফ হোসেন নামের এক কিশোর ছুরিকাঘাতে নিহত হয়। এ ঘটনায় আরিফের চাচাতো ভাই নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় সেদিন খুনের মামলা করেন। মামলার পর আরিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ছয় শিশুকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানার পুলিশ।