পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে ১৬ লাখ টাকা ছিনতাই

অপরাধ
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মতিঝিলের একটি ব্যাংকের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে এক কলেজছাত্রকে তুলে নেওয়া হয় নীল রঙের একটি পিকআপে। মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের ভুলতায়। ওই তরুণের কাছে থাকা ১৬ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন গাড়ির আরোহী দুই ব্যক্তি। পরে তাঁকে সাইনবোর্ড এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। টাকা ফেরত পেতে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়।

গত ৫ জানুয়ারি বিকেলের এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করেন কাউসার হোসেন নামের ওই কলেজছাত্র। মামলার তদন্ত করে পুলিশ বলছে, ওই অপহরণ ও ছিনতাইয়ে জড়িত ছিলেন নৌ পুলিশের দুই সদস্য। তাঁদের মধ্যে কনস্টেবল সাব্বির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কনস্টেবল সাব্বির আহমেদ এখনো পলাতক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সাব্বির হোসেন ছাড়াও তাঁদের তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এঁরা হলেন আবদুল্লাহ আল মামুন, শাহাদাত ও মোহন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া ১৬ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

সাব্বির হোসেন এ ঘটনায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাসেল হোসেন জানিয়েছেন। সম্প্রতি সাব্বির হোসেন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আসামিদের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত নন।

এদিকে ঘটনায় জড়িত নৌ পুলিশের কনস্টেবল সাব্বির আহমেদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি এখনো তা করেননি।

এদের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনস্টেবল সাব্বির হোসেনকে এ ঘটনার আগেই বরখাস্ত করা হয়েছিলেন অপর একটি অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে। তিনি আর আমাদের নৌ পুলিশের সদস্য নন। অপর কনস্টেবল সাব্বির আহমেদও পলাতক। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

ভুক্তভোগী কাউসার হোসেন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের ছাত্র। তাঁর কাছে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা তদন্ত চলমান। তাই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

তবে মামলায় তাঁর দেওয়া বিবরণে বলা হয়, কাউসার হোসেনের মামা আবদুল আজিজ মতিঝিলে ‘দোহার মানি এক্সচেঞ্জ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গত ৫ জানুয়ারি দুপুরে মামার কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা নিয়ে ৬ লাখ টাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে জমা করেন তিনি। বাকি ১৬ লাখ টাকা তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য রাস্তায় এলে একজন ব্যক্তি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জোর করে তাঁকে গাড়িতে ওঠান। প্রায় তিন ঘণ্টা গাড়িতে ঘুরিয়ে টাকাগুলো রেখে সাইনবোর্ড এলাকায় তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। নামিয়ে দেওয়ার আগে তাঁর কাছে অবৈধ টাকা ও কাগজ আছে লেখা–সংবলিত একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা এই অপহরণ ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটিও জব্দ করেছিলেন। নৌ পুলিশের ডাবল কেবিনের ওই পিকআপ ফেরত চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। পরে আদালত সেটি তাঁদের জিম্মায় দিয়েছেন বলে নৌ পুলিশের পরিদর্শক এ এফ এম তারেক সিদ্দিকী জানিয়েছেন।