প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিশোরীকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা

কিশোরী নীলা তাঁর ভাই অলকের সঙ্গে রিকশায় করে হাসপাতালে যাচ্ছিল। পথে মিজান রিকশার গতিরোধ করেন। পরে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে একটি গলির ভেতরে নিয়ে ছুরিকাঘাত করেন।

কিশোরী হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তরুণ মিজানুর রহমান
সংগৃহীত

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ভাইয়ের কাছ থেকে অসুস্থ কিশোরীকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণের নাম মিজানুর রহমান (২০)। রোববার রাতে ঢাকার সাভার পৌরসভার পালপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ছুরিকাঘাতে নিহত কিশোরীর নাম নীলা রায় (১৪)। সে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক গ্রামের নারায়ণ রায়ের মেয়ে। পরিবারের সঙ্গে সে সাভার পৌরসভার কাজিমুকমাপাড়া এলাকায় থাকত। সে স্থানীয় অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

পরিবার ও পুলিশের ভাষ্য, বছর দেড়েক ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন কাজিমুকমাপাড়ার পাশের এলাকা ব্যাংক কলোনির আবদুর রহমানের ছেলে কলেজছাত্র মিজান। নীলা রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। তাঁর ভাই অলক রায় তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাসা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর মিজান রিকশার গতিরোধ করেন। এরপর অস্ত্রের মুখে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে পালপাড়া এলাকায় নিয়ে যান তিনি। সাভার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের উল্টো দিকের একটি গলির ভেতরে নিয়ে নীলার গলায়, পেটে, মুখে ও ঘারে ছুরিকাঘাত করে মিজান পালিয়ে যান। মেয়েটির চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা রোডের প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় নীলার মৃত্যু হয়।পুলিশ জানায়, মিজান স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এর আগে একবার টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি।

নীলার বড় ভাই অলক রায়ের ভাষ্য, বাসা থেকে নেমেই তাঁরা মিজানকে দেখতে পান। তখন মিজান তাঁদের কিছু বলেননি। রিকশা নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে এসে মিজান গতিরোধ করেন। তাঁর হাতে দুটি বড় ছুরি ছিল। রিকশার গতিরোধ করে মিজান তাঁর বোনের সঙ্গে কথা আছে বলে রিকশা থেকে নামতে বলেন। তিনি বাধা দিলে মিজান তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। একপর্যায়ে মিজান তাঁর বোনকে জোর করে রিকশা থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। ভয়ে তিনি ও তাঁর বোন চিৎকার করার সাহস পাননি। এমনকি তিনি তাঁদের পিছুও নেননি। মিনিট বিশেক পরে তিনি জানতে পারেন, মিজান তাঁর বোনকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়েছেন।

অলক রায় দাবি করেন, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে মিজান তাঁর বোনকে উত্ত্যক্ত করতেন। তাঁর বোনকে প্রেম প্রস্তাব দিতেন। ফেসবুকে তাঁর বন্ধু হয়ে চ্যাট করতে বলতেন। এসবের প্রতিবাদ করলেই মিজান তাঁদের পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিতেন। আর তাঁরা মিজানকে দুর্ধর্ষ ও ক্ষমতাধর মনে করে ভয়ে সব চেপে যেতেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে আরও বিপদে পড়তে পারেন—এমন ভেবে তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানাননি।

মিজানের মা-বাবাকে বলার পরও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো মিজানের মা মেয়েকে মিজানের সঙ্গে কথা বলতে ও ফেসবুকে চ্যাট করার পরামর্শ দিতেন।
নীলার মা মুক্তি রায়

কেন মিজানকে দুর্ধর্ষ ও ক্ষমতাধর মনে করতেন এমন প্রশ্নের জবাবে অলক রায় বলেন, ‘ও বলত থানা-পুলিশ ওদের কথায় চলে। আর কিছু বখাটে ছেলের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল। এসব দেখে মনে করতাম ও অনেক ক্ষমতাধর। তাই নীরবে সব সহ্য করেছি।’

নীলার মা মুক্তি রায় বলেন, মিজানের মা-বাবাকে বলার পরও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। উল্টো মিজানের মা তাঁর মেয়েকে মিজানের সঙ্গে কথা বলতে ও ফেসবুকে চ্যাট করার পরামর্শ দিতেন। এ অবস্থায় মিজানের অত্যাচারে বছরখানেক আগে তাঁরা সাভারের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের বালিরটেকে চলে গিয়েছিলেন। ছেলে ও মেয়ের পড়ালেখার জন্য কয়েক মাস পরে আবার তাঁরা সাভার চলে আসেন। এর কিছুদিন পর থেকে মিজান আবার তাঁর মেয়ের পিছু নেন। এরপরও ভয়ে তাঁরা বিষয়টি পুলিশকে জানানো থেকে বিরত থাকেন।

প্রতিবাদ করলেই মিজান পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিতেন। আমরা মিজানকে দুর্ধর্ষ ও ক্ষমতাধর মনে করে ভয়ে সব চেপে যেতাম।
অলক রায়, নিহত কিশোরীর ভাই

সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ছুরিকাঘাতের ওই ঘটনার পর থেকে মিজানকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।