ফুলকপির সঙ্গে কপালও পুড়ল দুই ভাইয়ের

ফুলকপির খেতের সঙ্গে কপাল পুড়ল চুয়াডাঙ্গার কৃষক দুই ভাই সানোয়ার হোসেন ও মনোয়ার হোসেনেরপ্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় দুর্বৃত্তরা কৃষক দুই ভাইয়ের ছয় বিঘা জমির ফুলকপিতে আগাছানাশক ছিটিয়ে দিয়েছে। এতে অন্তত ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের ঝোড়ের মাঠ এলাকায় গতকাল রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সবজিগ্রামখ্যাত গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মাঠজুড়ে নানা ধরনের শীতকালীন সবজির চাষ হয়। কৃষকদের কেউ কেউ মোকাম ও হাটে পাঠানোর জন্য খেত থেকে সবজি তুলছেন, আবার কেউ কেউ পরিচর্যা করছেন। খেতের পাশেই পাকা রাস্তায় সারি সারি মিনিট্রাক ও স্থানীয় যানবাহন আলমসাধু, পাখিভ্যান ও লাটাহাম্বার সবজি বহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

এই গ্রামেরই ঝোড়ের মাঠে প্রান্তিক কৃষক সানোয়ার হোসেন ও মনোয়ার হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত খেত দেখছিলেন। সানোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তাঁরা দুই ভাই মিলে মৌসুমি নানা ধরনের সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে পারিবারিক আড়াই বিঘা জমিতে নিজেরাই ফুলকপির আবাদ করেছেন এবং কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে সাড়ে তিন বিঘা জমির ফুলকপি আগাম কিনেছেন। গ্রামের ঝোড়ের মাঠে মোট ছয় বিঘা জমির ফুলকপি নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ সকালে আবদুস সাত্তার নামের একজন কৃষকের কাছ থেকে খবর পেয়ে দুই ভাই মাঠে যান এবং ক্ষয়ক্ষতি দেখতে পান।

সানোয়ারের ভাষ্য, ‘প্রতি বিঘা জমিতে চার হাজার করে ফুলকপির গাছ রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ৫০০ গ্রাম ওজনের একেকটি ফুলকপি খেত থেকেই ২৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। প্রতিদিন কপির আকার ও দাম বাড়ছে। ঠিক সে সময় দুর্বৃত্তরা ইউরিয়া সার ও ধানের কুড়ার সঙ্গে দানাদার আগাছানাশক ছিটিয়ে চরম ক্ষতি করল। এতে ফুলকপিসহ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে অন্তত ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

মনোয়ার হোসেনের অভিযোগ, গ্রামের ওই মাঠে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ নানা ধরনের সবজির খেত থাকলেও দুর্বৃত্তরা সাতটি স্থানে ছড়িয়ে থাকা তাঁদের ছয় বিঘা জমির ফসলের ক্ষতি করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ফুলকপির আবাদ করেছিলাম। আগাম ফুলকপি কিনেছিলাম। দুর্বৃত্তরা আমাদের পথে বসিয়ে দিলেন। এখন কীভাবে সংসার চলবে, ঋণের টাকাই–বা কীভাবে শোধ করব, সেই চিন্তায় মাথা নষ্ট অবস্থা।’

গাড়াবাড়িয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের সভাপতি আবদুল কাদের এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি যে বা যারা কৃষক দুই ভাইয়ের ফুলকপিখেতের ক্ষতি করেছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানাননি। সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’