বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কারা এই কেএনএফ

প্রতীকী ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের এক নতুন সশস্ত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি এটি গড়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে।

কেএনএফ সম্প্রতি সংগঠনের নামে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে দাবি করেছে, রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। সেগুলো হলো বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। তারা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম—এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা একাধিক বিবৃতিতে কথিত এই সংগঠন জানায়, কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন করেছে তারা। তাদের মূল সংগঠনের সভাপতি নাথান বম।

আরও পড়ুন

তাদের দাবি, তাদের সামরিক শাখার শতাধিক সদস্য গেরিলা প্রশিক্ষণের জন্য মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশে পাড়ি জমান বছর তিনেক আগে। ২০২১ সালে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল ফিরে আসে। চলতি বছর তারা আত্মগোপনে যায়।

তবে ওয়াকিবহাল একাধিক সূত্র বলছে, কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ১৫ থেকে ২০ জনের মতো হতে পারে।

গত ১৭ এপ্রিল ভোরের দিকে রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের বিলপাড়ায় (তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া) সশস্ত্র হামলায় নিহত হন অ্যাকশন চাকমা নামের এক ব্যক্তি। কেএনএফের সদস্যরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে।

বিলাইছড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর অবশ্য এমন হত্যার ঘটনা নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গাটি দুর্গম। এমন একটি ঘটনার কথা আমরা শুনেছি। তবে এটি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হয়েছে বলে জেনেছি।’

বান্দরবানের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, কেএনএফের প্রধান হিসেবে যে নাথান বমের কথা বলা হচ্ছে, তিনি রুমা উপজেলার এডেন পাড়ার অধিবাসী। নাথান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের স্নাতক। রুমার এডেন পাড়ায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তবে তিনি এখন কোথায় আছেন, সেটা জানা যায়নি। এডেন পাড়ার বাসিন্দা নাথান বমের এক প্রতিবেশী প্রথম আলোকে জানান, নাথানকে মাস তিনেক ধরে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

রুমা থানার ওসি (তদন্ত) এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাথান বমের নেতৃত্বে একটি সংগঠনের কথা শোনা যায়। এরপর আমরা তাঁর খোঁজ করার চেষ্টা করি। তবে নাথান বমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা তাঁর খোঁজ করছি।’

এর আগে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) নামের একটি দল গড়ে ওঠে বান্দরবানের আলীকদমে। খুন, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কাজে জড়িয়ে পড়ে দলটি। এরপর ২০১৫ সালের নভেম্বরে দলটির ৭৯ জন সদস্য একযোগে আত্মসমর্পণ করেন।

এরপর দলটির তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরই আলীকদমে ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর কিছু তরুণ সদস্যকে নিয়ে আরেকটি সশস্ত্র দল গঠিত হয়। এর প্রধান রুংজুমা ত্রিপুরা প্রতিবেশী একটি দেশে চলে গেছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। ওই দলেরও এখন কোনো তৎপরতাও নেই।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আগে বান্দরবানে ‘মগ পার্টি’ নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা শুরু হয়। মারমা জাতিগোষ্ঠীর কিছু সদস্য এ দল গঠন করে বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে। সর্বশেষ আত্মপ্রকাশ করল কেএনএফ।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে কেএনএফ নামের একটি সংগঠনের তৎপরতার কথা শুনেছি। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে ফেসবুকে থাকলেও প্রকাশ্যে তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।’