বিয়ে আর চাকরির কথা বলে ২৪ রোহিঙ্গাকে নেওয়া হচ্ছিল মালয়েশিয়ায়

শিশু ও মানবপাচার
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রস্তুতির সময় ২৪ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে মা-মেয়েসহ তিন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

উদ্ধার রোহিঙ্গার মধ্যে ৬ জন শিশু, ১৫ নারী ও ৩ জন পুরুষ। তারা সবাই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। মালয়েশিয়াতে পৌঁছার পর সেখানে পুরুষদের ভালো চাকরি এবং তরুণীদের উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালেরা তাদের টেকনাফ উপকূলে জড়ো করেছিল।

আজ মঙ্গলবার ভোরেরাতে তাদের মাছ ধরার নৌকায় তুলে গভীর সাগরে অপেক্ষমাণ আরেকটি বিদেশি জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা ছিল।

পাচারের সঙ্গে জড়িত আটক তিনজন হলেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা এলাকার রাশিদা বেগম (৩৮), তাঁর মেয়ে রাজিয়া বেগম (১৮) ও বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার নুরুল আমিন ( ৩০)।

পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেলে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির থেকে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য ছয়জন রোহিঙ্গা নারীকে মাইক্রোবাসে করে কচ্ছপিয়া এলাকার শফিউল্ল্যার বাড়িতে আনা হয়। শফিউল্ল্যা পুলিশের তালিকাভুক্ত মানব পাচারকারী।

সন্ধ্যায় শফিউল্ল্যার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ছয় রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় দালাল নুরুল আমিনকেও আটক করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জাদিমোরা এলাকার মো. রফিকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আরও ১৮ জন রোহিঙ্গাকে। এ সময় বাড়ির মালিকের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, উদ্ধার রোহিঙ্গা নাগরিকদের পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। উদ্ধার রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ফেরত যাবেন, নাকি নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে পাঠানো হবে, তা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আটক তিনজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্ধার হওয়া একজন রোহিঙ্গা তরুণী বলেন, মালয়েশিয়াতে নিয়ে উপযুক্ত পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালেরা তাঁকে উখিয়ার একটি ক্যাম্প থেকে টেকনাফের জাদিমোরায় নিয়ে আসেন। আজ ভোররাতে বাহারছড়া উপকূল থেকে তাঁদের নৌকায় তোলার কথা ছিল। এর প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে।

আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় দালাল চক্র। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার লক্ষণ নেই, তাই ভবিষ্যতের উপায় খুঁজতে তাঁরা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন।

গত ২৭ এপ্রিল সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল থেকে ৩০ জন রোহিঙ্গা নারী-শিশু ও পুরুষকে উদ্ধার করেছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী। পরে তাঁদের নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পুলিশ বলছে, এখন বঙ্গোপসাগর শান্ত রয়েছে। এ সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছে মানব পাচারকারী চক্রের একাধিক গোষ্ঠী।