
সাতক্ষীরায় গত বুধবার উদ্ধার হওয়া শিশু বীথির ওপর হাকিম নূরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিশুটির বাবা গোলাম রসুল বিশ্বাস। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা শহরে আয়োজিত মানববন্ধন ও মৌন মিছিলে এই অভিযোগ করেন তিনি।
সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নূরুল ইসলামের বাসা থেকে গত বুধবার বিকেলে উদ্ধারের সময় বীথির (১০) গায়ে কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন ছিল। তবে সে সময় উপস্থিত পুলিশ প্রশাসন ও সরকারি চিকিৎসকেরা ক্ষতগুলো নির্যাতনের চিহ্ন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। শিশুটিকে পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গতকাল বেলা একটায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে শিশু বীথির ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল হয়। মানববন্ধনে শিশুর বাবা গোলাম রসুল বিশ্বাস তাঁর মেয়ে বীথির ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করে বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট (হাকিম) নূরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী বীথিকে নির্যাতন করেছেন।’
অন্য বক্তারা বলেন, নির্যাতিত শিশুটিকে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বড় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করা হয়। তারপর প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি। অবিলম্বে মামলা গ্রহণ করা না হলে আন্দোলনের হুমকি দেন তাঁরা।
এক ঘণ্টা চলা এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জাহিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শাহ আলম প্রমুখ।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নূরুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল রাতে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। প্রথমে ফোন ধরা হয়নি, একপর্যায়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
গতকাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নূরুল ইসলামের মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্তারিত প্রতিবেদন তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠিয়েছেন বলেও জানান নিতাই চন্দ্র সাহা।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে বীথির বাবা বলেন, তিনি এজাহার লিখে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে দিয়ে এসেছেন। এজাহারে হাকিম নূরুল ইসলামের স্ত্রী নাতাশা ও শাশুড়ি বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ এ বিষয়ে বলেন, বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বুধবার রাতে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে তিনি নির্যাতিত শিশুর বাবা গোলাম রসুল বিশ্বাসের কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি বলে দাবি করেন।
নির্যাতনের অভিযোগ বীথির: সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি বীথি প্রথম আলোকে বলেছে, সে এর আগে ঢাকার মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়িতে ছিল। বাড়িটি হাকিম নূরুল ইসলামের শ্বশুর নূরু সাহেব ও শাশুড়ি বিউটি বেগমের। ওই বাড়িতে সে থেকেছে ১১ মাস। সেখানে গৃহকর্ত্রী তাঁর ওপর নির্যাতন চালান। তার পিঠের ঘা ওই সময় দেওয়া গরম খুন্তির ছ্যাঁকা থেকে হয়েছে। হাতের দাগও ওই সময়ে হয়েছে।
এদিকে বীথির শরীরের ক্ষতগুলো পরীক্ষার জন্য গতকাল সদর হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ শরীফুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শরীফুল ইসলাম বলেন, বীথির শরীরে একটি পোড়া ক্ষত ও একটি গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকার চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। ক্ষত ও ছ্যাঁকার দাগগুলো দুই বা তিন দিনের নয়। তবে এগুলো দুই মাস আগেরও নয়।