বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হননি

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। ফাইল ছবি
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। ফাইল ছবি

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ২৪৩ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা আত্মসাতের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এঁদের মধ্যে একজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, চারজন অবসরে গেছেন। বাকিরা বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) ছাড়াও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। 

দুদক আইন অনুযায়ী, তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। আর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ার পর গ্রেপ্তার হওয়াটাই স্বাভাবিক।

কয়লা ঘাটতির বিষয়টি নজরে এলে গত বছরের ২৪ জুলাই ১৯ জনকে আসামি করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেন খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান। পরে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় দুদক। গত ২১ জুলাই দুদক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।

 দুদক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, খনি কোম্পানির মামলায় ১৯ আসামির মধ্যে দুদক পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছে। নতুন করে ৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এঁদের মধ্যে সাতজনই খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাকি দুই কর্মকর্তা খনিতে চাকরি করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে ২৪৩ কোটি টাকার কয়লা আত্মসাৎ করেছেন বিসিএমসিএলের কর্মকর্তারা। খনি থেকে খোয়া যাওয়া ১ লাখ ৪৩ হাজার টন কয়লা বিভিন্ন সময় খনির বাইরে পাচার করার কথা এতে বলা হয়। 

>অভিযোগপত্রে নাম আসা সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কেউবা অবসরে, কেউ কেউ শীর্ষ পদে।

কয়লা চুরির ঘটনায় সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র হাবিব উদ্দিন আহাম্মদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পেট্রোবাংলা। এম নুরুল আওরঙ্গজেবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একজন হলেন সরকারি সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে সদস্য মো. আবদুল আজিজ খান। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অবসরে যাওয়া তিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মো. মাহবুবুর রহমান, খুরশীদুল হাসান ও মো. আমিনুজ্জামান। 

এ ছাড়া আসামি ছিলেন না, কিন্তু অভিযোগপত্রে নাম আসা মহাব্যবস্থাপক মো. শরিফুল আলম বর্তমানে অবসরে রয়েছেন। দুদকের তদন্তে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগপত্রে তাঁদের আসামি করা হয়নি। 

সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়া বিসিএমসিএলের যে ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে তাঁদের ১৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। কেবল সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলাম। এ ছাড়া দুই কর্মকর্তাকে সরকারের দুটি কোম্পানিতে বদলি করা হয়েছে। 

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনে যেভাবে আছে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।’ 

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিসিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ চৌধুরী রোববার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমরা দুদকের অভিযোগপত্র পাইনি। এটি পেলে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

কয়লা চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা গঠিত কমিটি খোয়া যাওয়া কয়লাকে চুরি হিসাবে গণ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালককে প্রধান করে গঠিত কমিটি খোয়া যাওয়া কয়লাকে সিস্টেম লস উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়, পরে সমালোচনার মুখে প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কমিটি এখনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক মুঠোফোনে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে। এই মামলার অভিযোগপত্র ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, অতীতে বিভিন্ন মামলায় অভিযোগপত্র গঠনের আগেই গ্রেপ্তারের দৃষ্টান্ত রয়েছে।