ভাড়া করা লোক দিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ারকে হত্যা করেন তাঁর সহকর্মী

প্রকৌশলী দেলোয়ার
প্রকৌশলী দেলোয়ার

গত ১১ মে মিরপুরের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ভাড়া করা মাইক্রোবাসে নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাঁর সহকর্মী (সহকারী প্রকৌশলী) আনিছুর রহমান ওরফে সেলিম ও আনিছুরের দুই সহযোগী শাহিন ছিলেন। হাবিব মাইক্রোবাস চালাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাসটি রূপনগর দিয়ে বেড়িবাঁধে ওঠার পর আনিছুর রহমানের ইশারায় শাহিন প্রকৌশলী দেলোয়ারের গলায় রশি পেঁচিয়ে টান দেন। তখন আনিছুরও চেপে ধরেন দেলোয়ারকে। এরপর দেলোয়ার নিস্তেজ হয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে পেটানো হয়। পরে দেলোয়ারের লাশ উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি প্লটে ফেলে দেওয়া হয়।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে হত্যায় গ্রেপ্তারের পর ভাড়াটে খুনি শাহিন ও মাইক্রোবাসের চালক হাবিব এভাবে পুলিশের কাছে ও আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন বলে মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত বুধবার আনিছুরকে মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিরপুর থেকে শাহিন ও বাড্ডার নদ্দা এলাকা থেকে হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তিনজনকে আদালতে হাজির করা হলে শাহিন ও হাবিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর আনিছুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় তুরাগ থানার পুলিশ।

গত ১১ মে সকালে মিরপুর ১ নম্বরের বাসা থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তরার ১৭ নম্বর ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গল থেকে দেলোয়ারের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোদেজা বেগম তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

গতকাল বিকেলে হত্যা মামলার অগ্রগতি জানাতে উত্তরা পূর্ব থানায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল বলেন, তারা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ (উদ্দেশ্য) এখনো বের করতে পারেননি। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও নিহত দেলোয়ারের মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার শাহিন ও হাবিব আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন, আনিছুর খুনের জন্য তাদের ভাড়া করেন। ঘটনার সময় আনিছুরও গাড়িতে ছিলেন এবং তার নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এখন সেলিম কেন তার নির্বাহী প্রকৌশলী খুন করলেন, তার নেপথ্যে আরও কেউ রয়েছে কিনা তা জানতে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তা ও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় প্রকৌশলী দেলোয়ারকে মাইক্রোবাসে তোলার সময় একজন সাদা সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) পরা ছিলেন। তিনি এক রিকশাচালকের মুঠোফোন দিয়ে দেলোয়ারকে বাসার বাইরে আসতে বলেন। পরে সেই রিকশাচালককে আটক করা হলে তিনি ১০০ টাকার বিনিময়ে সাদা পিপি পরা ওই ব্যক্তি তার মুঠোফোনটি নিয়ে কথা বলে জানান।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আনিছুর দাবি করেন ঘটনার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে বাসায় ছিলেন। বাসার ঠিকানাও ভুল দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাসার সামনের সিসি ফুটেজে দেখা গেছে, ১১ মে সকালে সাদা পিপিই ও কালো জুতা পড়ে তিনি বাসা থেকে বের হচ্ছেন। প্রকৌশলী দেলোয়ারকে যেখান থেকে মাইক্রোবাস তোলা হয়, সেখান থেকে সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্যের সঙ্গে আনিছুরের বাসার সামনের ফুটেজের মিল রয়েছে। তিনি দেলোয়ারের সঙ্গে সেদিন গাড়িতে ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে দেলোয়ারকে খুন করার বিষয়ে তিনি মুখ খুলছেন না।