ভিসেরা রিপোর্টও বলছে, রায়হানের মৃত্যু অতিরিক্ত আঘাতে

রায়হান আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত মো. রায়হান আহমদের ভিসেরা রিপোর্ট তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে। অতিরিক্ত আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে ভিসেরা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম পিবিআইকে ভিসেরা রিপোর্ট হস্তান্তর করেন।

আজ রোববার বিকেলে যোগাযোগ করলে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। রিপোর্টে মার্ডার করার বিষয়টি এসেছে। এ রিপোর্ট সামনে রেখে তদন্ত চলবে।’

মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ সূত্র জানায়, রায়হানের ভিসেরা নমুনা গত ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ভিসেরা রিপোর্ট এলে পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। ওই রিপোর্টে রায়হানের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত আঘাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

পিবিআই জানায়, সিলেট নগরীর আখালিয়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিনই ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে রায়হানের প্রথম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

ময়নাতদন্ত শেষে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ভিসেরা রিপোর্টেও তার সত্যতা পাওয়া গেল। তবে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশনা থাকলেও প্রথম দফায় তা মানা হয়নি। পরে ১৫ অক্টোবর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফায় আবার রায়হানের ময়নাতদন্ত করা হয়।

হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁঞাসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান আকবর। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আকবরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বরখাস্ত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদ এবং প্রত্যাহার হওয়া এএসআই আশেক এলাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁরা কেউ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেননি।

আকবরকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে পুলিশের সদর দপ্তরের একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ উপপরিদর্শক হাসান উদ্দিনকে ২২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২৫ নভেম্বর দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ঘটনার সময় কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ আবদুল বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।