ভেঙে দেওয়ার পর চলছে পুনর্নির্মাণ

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে সরকারি একটি সংযোগ সড়কের ওপর নির্মাণ করা চারটি পাকা বাড়ির অংশবিশেষ গত বৃহস্পতিবার ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন থেকে আবার এসব স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এ সড়কে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে ভাটিপাড়া হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত একটি সড়ক রয়েছে। এর ১০০ গজ দক্ষিণ থেকে পূর্ব দিকে ভাটিপাড়া গ্রামে একটি সংযোগ সড়ক আছে। এর খতিয়ানে উল্লেখ আছে সড়কটির দৈর্ঘ্য ৮ শতাংশ আর প্রস্থ ১৬ ফুট।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে কয়েকজন বাসিন্দা সংযোগ সড়ক দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। এ ছাড়া সড়কে গাছ লাগিয়েছে। এতে সড়কটির প্রস্থ কমে গেছে। এতে এ সড়ক দিয়ে গাড়ি কিংবা মালামাল বহনকারী যান চলাচল করতে পারে না। গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবারের সদস্যদের সমস্যা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৫ নভেম্বর একই গ্রামের বাসিন্দা শামসুদ্দিন হায়দার, জসিম উদ্দিন, মুহাম্মদ সারুয়ার হোসাইন এবং এ বি এম সেলিম হায়দার প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন। এতে বলা হয়, গ্রামের মনোয়ারা বেগম, তারা মিয়া, আবদুল ওহাব, আবদুল আওয়াল, আবদুল হান্নান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক, মো. শহিদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা মো. আসাদুল্লাহ, মহিজ উদ্দিন, সোহরাব মিয়া ও মজিবুর রহমান সড়কের অংশ দখলের সঙ্গে জড়িত।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গত ২৭ অক্টোবর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ নুসরাত জাহানকে সাত দিনের মধ্যে উচ্ছেদপ্রক্রিয়া শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর। শাহ নুসরাত জাহান গত বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে চারটি অবৈধ স্থাপনার অংশবিশেষ ভেঙে দেন।

ভুক্তভোগী শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। এখন পুরো পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ওই পথ দিয়ে যাতায়াতে নিষেধ করা হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙা বাড়িগুলোর অংশ আবার নির্মাণের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখে বালু ও মাটি ফেলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের মাঝে ইট ফেলে রাখা হয়েছে।

আবদুল হক বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আসাদুল্লাহও মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের দুজনেরসহ কয়েকটি বাড়ির অংশবিশেষ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি অন্যায় করা হয়েছে। এখন উপজেলা প্রশাসন বুঝতে পেরে নিজ দায়িত্বে ঠিক করে দিচ্ছে।’

ঘটনাস্থলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সহকারী কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ও উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার ফরিদ আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সামাজিকভাবে সুরাহা করা যেত। এভাবে বাড়িগুলো না ভাঙলেও চলত।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুল্লাহ বলেন, ‘নোটিশ দেওয়ার কথা বলা হলেও আমরা তা পাইনি। হুট করে এসে বাড়ি ভাঙচুর করাটা ঠিক হয়নি। তবে কারও যাতায়াত বন্ধ করে থাকলে তা-ও ঠিক হয়নি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি বিনতে সালাম গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘ভেঙে দেওয়া বাড়িগুলো আবার সংস্কার করা হচ্ছে, এমন খবর আমি জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর আবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’