মধুমতী নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রাম ও দিগনগর ঘাটে মধুমতী নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। চরডাঙ্গা গ্রামে গোপালগঞ্জ সদরের ভব বিশ্বাস ও দিগনগর ঘাটে স্থানীয় ১৩ জন ব্যক্তি বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন।

গত বুধবার চরডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আধা কিলোমিটার প্রশস্ত মধুমতীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত কয়েক শ বাঁশ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে টানানো হয়েছে কয়েক শ মিটার জাল। বেড়ার পূর্ব প্রান্তে চরডাঙ্গা গ্রাম। পশ্চিম প্রান্তে নড়াইলের লোহাগড়ার চাচই গ্রাম। এ সময় চরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শেখ জালাল বলেন, গত দুই মাস ধরে বেড়া দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এ বেড়ার সঙ্গে টানানো জালে ছোট-বড় সব মাছই ধরা পড়ছে।

মাছ ধরছেন গোপালগঞ্জ সদরের ঘ্যানাসুর এলাকার রামকৃষ্ণ মণ্ডল, অমল মলিক ও গোবিন্দ বিশ্বাস নামের তিন জেলে। ওই জেলেদের রান্নার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ঘ্যানাসুর এলাকার বিধান রায়। তিনি বলেন, এই বেড়া দিয়েছেন ভব বিশ্বাস। এ ফাঁদে শুধু ইলিশ ধরা পড়ছে। ছোট মাছ ধরা হয় না। এ ব্যাপারে ভব বিশ্বাস বলেন, তিনি অত্যন্ত গরিব মানুষ। আয়ের অন্য কোনো উৎস নেই। তাই নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ ধরছেন।

একই দিন দিগনগর ঘাটে দেখা যায় সেখানে বাঁশের বেড়ার সঙ্গে সুতার জাল ব্যবহার করা হয়েছে, যা দিয়ে ছোট আকৃতির কোনো মাছই বের হতে পারে না।

দিগনগর ঘাট-সংলগ্ন ছাতিয়ারগতি গ্রামের কৃষক আজাদ মোল্লা বলেন, ‘মাছ মাইরা শেষ কইরা ফেলাচ্ছে। জাটকা বা বাইলার গুঁড়া সবকিছুই ওই ফাঁদে আটকা পড়ছে।’

এ সময় এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর দুই পার কাতরাসুর ও টিকরপাড়া গ্রামের ১৩ জন ব্যক্তি ওই বেড়া দিলেও তাঁদের সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা। তবে তাঁরা ওই নেতাদের নাম বলতে রাজি হননি।

মাছ ধরায় জড়িত কাতরাসুর গ্রামের আলমগীর মোল্লা বলেন, ১৫ দিন ধরে এই বেড়া তাঁরা দিয়েছেন। তবে বেশি মাছ ধরা পড়ছে না। কোনো দিন সাত কেজি, কোনো দিন দশ কেজি মাছ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এ কাজে তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন টিকরপাড়ার পলাশ বিশ্বাস। তিনিই সব করছেন।

বেড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করে পলাশ বিশ্বাস গত বুধবার বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জানি আড়াআড়িভাবে বেড়া দেওয়া অবৈধ। নদী থেকে জাটকা ধরাও বেআইনি। তাঁদের তো বাধা দেওয়া হয় না। আমরা বেড়া দিলে কী ক্ষতি? এই বেড়া দিতে আমার দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫০ সালের মৎস্য সংরক্ষণ আইনে কোনো নদীতে বা কোনো চলমান স্রোতোধারায় বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, মধুমতী নদীতে মাছ শিকারের জন্য দেওয়া দুটি বেড়া অবিলম্বে অপসারণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, যাঁরা বেড়া দিয়েছেন, তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে তা সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। সে সময়সীমা গত বুধবার শেষ হয়েছে। অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বেড়া দুটি অপসারণ করা হবে।