মাঝেমধ্যেই পালাচ্ছেন বন্দীরা, ঝুঁকিতে কারাগারের নিরাপত্তা

কারাগার
প্রতীকী ছবি

ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল (২০) নামের খুনের মামলার এক আসামিকে গতকাল শনিবার ভোর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর মীরের কান্দিতে। তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় কারাগারে আসেন। কারাগারের কর্ণফুলীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, গতকাল ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ফরহাদ ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে মুখ ধুয়ে সামনের দিকে যাচ্ছেন। তবে সকালে কারারক্ষীরা প্রতিদিনের মতো বন্দীদের গুনতে গিয়ে ফরহাদকে পাননি। এরপর কী ঘটেছে, কেউ বলতে পারছেন না।

ফরহাদকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হক গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ফরহাদ বয়সে তরুণ। তরুণ আসামিরা অনেক সময় লুকিয়ে থাকেন, তাই এখনো খোঁজা হচ্ছে। রাত পর্যন্ত না পেলে বুঝতে হবে তিনি পালিয়ে গেছেন।
এদিকে বন্দীদের এভাবে পালানোর ঘটনা নতুন নয়। এর আগে গত ৬ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মইয়ের সাহায্যে পালিয়ে যান যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর ছিদ্দিক। তিনি আগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। পালানোর পর থেকে তাঁকে এখনো পাওয়া যায়নি। ৩ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে রাজু নামের এক বন্দী আরেক বন্দীর নামে (ভুল রিলিজে) বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এই বন্দীর বিষয়ে জানতে বাগেরহাটের জেল সুপার ও জেলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, এ ধরনের ঘটনা তাঁদের জানা নেই।

কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা কারাবন্দীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও বেড়েছে। গত ২৯ আগস্ট রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) থেকে পালিয়ে যান মিন্টু মিয়া নামের এক আসামি। পরে তাঁকে বাবু বাজার এলাকা থেকে আটক করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি থাকা আসামি সুজন মল্লিক (২৫) জানালার গ্রিল ভেঙে পালান।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হারুনুর রশিদ নামের ডাকাতি মামলার এক আসামি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানা থেকে পালান। ১১ দিন পর তাঁকে কারাগারে ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার দাশ।

বন্দী পালানোর ঘটনা কেন বাড়ছে জানতে চাইলে সাবেক কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) লিয়াকত আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতিই এ জন্য দায়ী। দায়ী কারারক্ষীরাও। এ ছাড়া যাঁদের জন্য এসব অপরাধ হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই এসব বাড়ছে। বন্দী বা কয়েদি পালানোর পর আটক করাটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো পালালেন কীভাবে। এর জন্য ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের দায় রয়েছে।

চট্রগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খুনের মামলার আসামি ফরহাদ পালানোর দায় কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কেউই দায় এড়াতে পারেন না।
কারাগারের নিরাপত্তার ঝুঁকিতে শঙ্কিত কারা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। এসব নিয়ে কারাগারের কর্মর্কতা ও কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। এর আগে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দেশের ৬৮টি কারাগারে পাঠানো এক চিঠিতে বলেন, ‘কোনো কোনো কারাগারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, এমনকি বন্দী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে, যা চরম প্রশাসনিক দুর্বলতার নামান্তর এবং মোটেই তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারাগার একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান। বন্দী পলায়নসহ যেকোনো দুর্ঘটনা রোধকল্পে কারা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা আবশ্যক।’

কারা অধিদপ্তরের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশেই কারাগার, হাসপাতাল ও আদালত থেকে কারাবন্দী পালানোর ঘটনা ঘটছে। কারাগারের জেল সুপার ও জেলার যদি কারা অভ্যন্তরে আরও তদারকি করতেন এবং ডেপুটি জেলাররা যদি তাঁদের নির্দিষ্ট এলাকাগুলো নিয়মিত ঘুরতেন এবং কারারক্ষীরাও যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে কারাগারের এমন ঘটনা ঘটত না। তাদের জন্য দায় সবার ওপর পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।’ পরে রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এখন আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’