মানসিক চাপ সইতে না পেরে দুই নারীর আত্মহত্যা

ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী
ঝুলন্ত লাশ। ছবিটি প্রতীকী

পাবনার চাটমোহর উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে আজ বুধবার দুই নারীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। দুজনই স্বামীর বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন। পুলিশের দাবি, তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনায় কোন অভিযোগ আসেনি।

নিহত দুজন হলেন বিলচলন ইউনিয়নে রামনগর গ্রামের আলাউদ্দিনের স্ত্রী রেবা খাতুন (৪৫) ও পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষ্টপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মাজেদা খাতুন (৩৪)।

স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেবা খাতুনের বড় ছেলে বিদেশে থাকেন। তিনি বিদেশে লোকপাঠানোর ব্যবসা করেন। কিছু লোক কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে টাকা ফেরত চাইছেন। মাঝে মধ্যেই বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে রেবা খাতুন মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি ছেলের কাছে ফোন করে কান্নাকাটি করেন। সকালে বাড়ির ঘরের আড়ার সঙ্গে তাঁর ঝুলন্ত লাশ মেলে।

রেবা খাতুনের স্বামী আলাউদ্দিন কান্নাজড়িক কন্ঠে বলেন,‘ আমরা কিছুই বুঝবের পারিনেই। কি দিয়ে কি হলো জানিনে।’

অন্যদিকে মাজেদা খাতুন বিষয়ে গ্রামের লোকজনের ভাষ্য, পর পর তিনটি কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন মাজেদা। বিষয়টি তাঁর স্বামী মেনে নিতে পারছিলেন না। কন্যা সন্তান হওয়ায় স্বামী ও পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রায়ই কথা শোনাতেন। ঘটনার রাতেও বিষয়টি নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। পরে স্বামী রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। সকালে ঝুলন্ত অবস্থায় মাজেদার লাশ মেলে। এরপর থেকে তাঁর স্বামীও নিখোঁজ রয়েছেন।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দিন বলেন, ঘটনায় নিহতদের পরিবার থেকে কোন অভিযোগ আসেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কোনো কারণে তাঁরা আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তর প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিস্কার হওয়া যাবে। দুটি পৃথক অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তাঁদের মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাওয়া ও নিজের প্রতি আস্থাহীনতা মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। এটা আসলে কোনো সমাধান নয়। এতে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজের বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেলেই আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

পাবনার বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যার প্রবনতা রয়েছে। এরমধ্যে চাটমোহর উপজেলায় আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। জেলা পুলিশের এক হিসাব থেকে দেখা গেছে, গত চার বছরে জেলায় ১ হাজার ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ২৪২, ২০১৭ সালে ৩০১, ২০১৮ সালে ৩০১ জন এবং চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯৩ জন আত্মহত্যা করেছেন।